সকালবিডি স্পোর্টস টোয়েন্টিফোর ডটকম: রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি বুঝতেই পারছেন না, ভিনিসিয়ুসের গোল উদ্যাপনে সমস্যাটা কোথায়, ‘সে ব্রাজিলিয়ান। নাচেও খুব ভালো। এতে তো কারও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
অথচ ভিনিসিয়ুসের এই গোল উদ্যাপন নিয়েই তুলকালাম চলছে। রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গারের পাশে দাঁড়িয়েছেন পেলে, নেইমার, এডের মিলিতাওয়ের মতো ব্রাজিলিয়ানরা। রিয়ালও বসে নেই। ‘আইনি ব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্প্যানিশ ক্লাবটি। গলার সুর চড়া করেছেন ব্রুনো গিমারেজও। নিউক্যাসল ইউনাইটেডের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অভিযুক্ত ফুটবল এজেন্টের গ্রেপ্তার দাবি করেছেন। বার্সেলোনার নতুন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনিয়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইনস্টাগ্রামে। তাঁর পোস্ট, ‘আমি নাচ দেখতে চাই। আনন্দ চাই।’
এমনকি আগামী সোমবার যে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবে রিয়াল, নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকো মাদ্রিদের স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতাও বলেছেন, নিজের ইচ্ছেমতো গোল উদ্যাপনের অধিকার সবারই আছে। আর ভিনিসিয়ুস ভালো ছেলে। তাঁর উদ্যাপন কাউকে আঘাত করতে নয়।
ঘটনাটা খুলে বলা যাক। স্পেনের ফুটবল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (এইএএফ) প্রধান পেদ্রো ব্রাভো গত বৃহস্পতিবার ভিনিসিয়ুসের গোল উদ্যাপনের ধরনের সমালোচনা করেন। দেশটির টিভি শো ‘চিরিনগুইতো শো’তে ব্রাভো বলেছেন, ভিনিসিয়ুসের গোল উদ্যাপন প্রতিপক্ষের প্রতি অসম্মানসূচক। তাঁর উদ্যাপনকে বানরের মতো উল্লেখ করে ব্রাভো বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষকে সম্মান করতে হবে। নাচতে চাইলে ব্রাজিলে যাও। স্পেনে বানরের মতো আচরণ থামিয়ে প্রতিপক্ষকে সম্মান করতে হবে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরপরই ঝড় ওঠে। ব্রাভোর বিরুদ্ধে বর্ণবাদী মন্তব্যের অভিযোগ তুলে তাঁকে ধুয়ে দিতে শুরু করেন সবাই। এরমধ্যে ব্রাজিল থেকে এসেছে কড়া প্রতিবাদ। ভিনির পাশে দাঁড়িয়ে উত্তর দিয়েছেন স্বয়ং পেলে।
তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘ফুটবল আনন্দের, নাচের। দুঃখজনকভাবে বর্ণবাদ এখনো আছে। তবে এটা আমাদের হাসি বন্ধ করতে পারবে না। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এভাবেই লড়াই চালিয়ে যাব আমরা; নিজেরা আনন্দে থাকতে ও সম্মান পেতে লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
পিএসজির ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারও ভিনির পক্ষ নিয়ে টুইট করেন। ‘বাইলা ভিনি জেআর’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে টুইট করেন। পর্তুগিজ ভাষায় ‘বাইলা’ অর্থ ‘নাচ।’ ব্রাজিলে এই হ্যাশট্যাগ টুইটারে ট্রেন্ড হতে সময় লাগেনি। ইনস্টাগ্রামেও নেইমার লিখেছেন, ‘ড্রিবল করো, নাচো, নিজে যা তা–ই থাকো। তুমি যেমন সেভাবেই ভালো লাগে। এটা ধরে রাখো। পরের গোলে আমরা একসঙ্গে নাচব।’ ভিনিসিয়ুস এই পোস্টে ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমার এবং তাঁর নাচের ছবি পোস্ট করে মন্তব্য করেন, ‘সব সময়।’
ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনও (সিবিএফ) ভিনির পক্ষ নিয়ে ‘বাইলা ভিনি জেআর’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে করা টুইটে লিখেছে, ‘নাচ হবে, ড্রিবলিং হবে, তবে সম্মানবোধটা থাকবে সবার ওপরে। বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের খেলোয়াড় বর্ণবাদের শিকার হয়েছে। সিবিএফ তার পাশে দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করছে।’
নেইমার নাকি ভিনিসিয়ুস? ব্রাজিল কোচের চোখে কে সেরা নেইমার ও ভিনিসিয়ুস – এই ব্রাজিলের দুই মধ্যমণি রিয়াল তারকা ভিনিসিয়ুস নিজেও এ নিয়ে কথা বলেছেন। রেকর্ড করা বিবৃতিতে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার বলেছেন, ‘আমি বর্ণবাদী আচরণ এবং বিদেশি হিসেবে ঘৃণার শিকার হয়েছি। জগতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উদ্যাপন করতেই এই নাচ। হয় আপনি এটাকে মেনে নেবেন, সম্মান করবেন কিংবা পাত্তা দেবেন না। কিন্তু আমি থামব না।’
লা লিগায় সোমবার আতলেতিকো মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে রিয়াল। এই ম্যাচ সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার ভিনিসিয়ুসকে সতর্ক করে দেন আতলেতিকো মিডফিল্ডার কোকে। ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোয় ভিনিসিয়ুস গোল উদ্যাপনে নাচলে ‘সমস্যা হবে’ বলেই মনে করেন তিনি, ‘সমস্যা হবে এটা নিশ্চিত।’
আতলেতিকো সমর্থকেরা ভিনির নাচকে ভালোভাবে নেবেন না বলে মনে করেন কোকে। তবে কোকে মনে করেন, নিজের মতো করে গোল উদ্যাপনের অধিকারটা সবারই আছে, ‘সে যদি গোল করে নাচে, তাহলে এটা তো তাঁর ইচ্ছা, তাই না? আমি সেটা মেনে নেব কি না? সবারই গোল করে উদ্যাপনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে।’
পেদ্রো ব্রাভো অবশ্য পরে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। টুইটে তিনি বলেছেন, ‘বক্তব্যের প্রকাশটা বাজেভাবে হয়েছে…রুপক অর্থে বোঝাতে চেয়েছিলাম বোকামো করছে।’ ভিনিসিয়ুসের উদ্যাপন স্প্যানিশ ফুটবলে এখন পরিচিত। গোল করে ডান–বাঁয়ে কোমর দুলিয়ে মজা করে নাচেন এই তারকা। এই নাচ তিনি নিয়েছেন এমসি কাইকুয়ের গান ‘টাকা অ্যা জেরেকা প্রা মিম’ থেকে।