মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে বিভাগীয় প্রার্থীতা চায় সহকারী শিক্ষকেরা।
শিশুর শারীরিক,মানসিক,সামাজিক, নৈতিক,মানবিক,নান্দনিক,আধ্যাত্নিক ও আবেগিক বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধে,বিজ্ঞানমনস্কতায়,সৃজনশীলতায় ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করে একজন শিক্ষক।
প্রাথমিক শিক্ষায় একজন শিক্ষকের ভূমিকা ছায়ার মত।সারাক্ষণ শিক্ষার্থীকে সন্তানতুল্য করে গড়ে তোলেন,ভালবাসেন।
কিন্তু শিক্ষকের মানসিক প্রশান্তির জায়গা কোথায়? সৃজনশীল বিকাশের সুযোগ কোথায়?ক্রমে সে সুযোগ সংকীর্ণ হওয়ার পথে।যদি পূর্বের গেজেটগুলো পর্যবেক্ষণ করি দেখা যায় ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫ ইং এস আর ও ৩৯৭-এল/৮৫,১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৪ ইং এস আর ও ৩৫২ নং- আইন /৯৪,৩১ আগস্ট ২০০৩ ইং এস আর নং ২৬০- আইন ২০০৩ ইং সহকারী শিক্ষকদের উপজেলা শিক্ষা অফিসার,সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতির সুযোগ ছিল এবং উক্তপদগুলোতে বিভাগীয় প্রার্থীতা ৪৫ বছরচবয়স শিথিলযোগ্য ছিল। এ গেজেটটের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে ১৪৪ পদের সর্বশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হয়।
কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নন ক্যাডার ও ক্যাডার বিধি ২০১৯ খসড়া করে সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থীতা বাতিল করে।এই খসড়াতে প্রধান শিক্ষকদের সহকারী শিক্ষা অফিসার ও সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদে ( বয়স ৪৫ বছর শিথিল যোগ্য) বিভাগীয় প্রার্থীতা দেয়া হয়।
বর্তমানে সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ( ডিগ্রী) বা স্নাতক সম্মান ২য় শ্রেণীতে উন্নীতকরণ করা হয়েছে।সে প্রেক্ষিতে উচ্চতর ডিগ্রী সম্পন্ন শিক্ষক এ পেশায় আসছেন।তাদের প্রত্যেকের স্বপ্ন ছিল বিভাগীয় প্রার্থীতা।২০১৯ খসড়া সে স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে।মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে তা বাধা হতে পারে যা কাম্য নয়।
২০১৯ নিয়োগবিধির বড় দুর্বলতা প্রধান শিক্ষক থেকে ৮০% বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে নেওয়া হবে।সহকারী উপজেলা অফিসারের মোট পদ সংখ্যা ২,৫৮৯ টি।এটা মোট পদের. ৩৩% দাড়াঁয়।সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদ সংখ্যা ৫০৫ টি।এটাও মোট পদের. ৮৩%।
উল্লেখ্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগবিধি ২০১৯ এ প্রধান শিক্ষক পদে ৬৫% ও ৩৫% সরাসরি নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।পূর্বে সহকারী শিক্ষক ৩ বছর অভিজ্ঞতা দিয়ে ৩৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারতেন।২০১৪ সালের গেজেটে বয়স ৩০ করে সে সুযোগ বাতিল করা হয়।
প্রধান শিক্ষক পদে ১০০% পদোন্নতির ব্যবস্থা করবেন বলে জানান সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন।
বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৩ হাজার ৬০১ টি।এতে প্রায় ৩ লক্ষ ২২ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন।প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ।চাকরিতে প্রবেশ করতেই অনেকের ৩০ বছর হয়ে যায়।এ সেক্টরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ অনেক দিন যাবত বন্ধ আছে।চলতি দায়িত্ব দিয়ে এসব পদ পূর্ণ করা হচ্ছে।ধরি ২০ বছর পর কারো প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি হলে বয়স দাঁড়াবে ৫০ বছর।একজন প্রধান শিক্ষক বিভাগীয় প্রার্থীতার বয়স ৪৫ বছর ছাড়িয়ে গেলেন।আবার বিধি অনুসারে প্রধান শিক্ষক পদে তিন বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে।বয়স দাড়াঁবে ৫৩ বছর।প্রধান শিক্ষকদের সহকারী শিক্ষা অফিসার ও সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদে বিভাগীয় প্রার্থীতা রাখা শুভঙ্করের ফাঁকি।এ বিধিতে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও নন ক্যাডার প্রধান শিক্ষক এ সুবিধা পাবেন।প্রধান শিক্ষক পদে ১০০% সরাসরি পদোন্নতি করা হলেও ১৫% সহকারী শিক্ষক এ পদোন্নতি পাবেন।বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সরাসরি পদোন্নতি সুষ্ঠু সমাধান হতে পারে না।বিভাগীয় প্রার্থীতার মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা হতে পারে এর সমাধান।
২০১৯ খসড়া সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে হতাশার বীজ বপন করেছে।অনেক তরুণ শিক্ষক বিভাগীয় প্রার্থীতার সুযোগে আকৃষ্ট হয়ে এ পেশয়য় এসেছেন।সহকারী শিক্ষক পদটি ব্লকপোস্টে পরিণত হওয়ায় ভবিষ্যতে দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক এ পেশায় আসবেন কিনা এ প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের মধ্য মানসিক অবসাদ বাসা বাধঁছে।মানসিক অবসাদ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে আগামী প্রজন্ম তৈরি করা সম্ভব নয়।শিক্ষকরা পাঠে প্রণোদনা পাবে না যখন তারা জানে তাদের ভাগ্যের তেমন উন্নয়ন নেই।নেই সুযোগ সুবিধা।
শিক্ষকদের স্বপ্ন থাকে বিভাগীয় প্রার্থীতার মাধ্যমে অফিসার হয়ে দেশ ও দশের সেবা করবেন।২০১৯ খসড়া স্বপ্ন ভেঙ্গে দিল।ভাঙ্গা মন নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের দ্রষ্টা হবেন কি করে একজন শিক্ষক।তাছাড়া সরকারি অন্যান্য বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে বিভাগীয় প্রার্থীতা বহাল রয়েছে।এমনকি ক্যাডার পোস্টে পদোন্নতিবিধি ২০১৭ আছে।ক্যাডার পোস্টে জয়েন করে চার বছর হলেই পদোন্নতি এক্সাম দিয়েউপরের পদে আসীন হতে পারে।সহকারী শিক্ষকরা সরাসরি পদোন্নতির মাধ্যমে ৫০% এবং৫০% বিভাগীয় প্রার্থীতার মাধ্যমে সহকারী শিক্ষা অফিসার,সহকারী ইন্সট্রাক্টর,ইন্সট্রাক্টর পদে সুযোগ চান।২০২০ মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সহকারী শিক্ষকদের হতাশ করবেন না।
লেখকঃ
ফারজানা আক্তার
সহকারী শিক্ষক
বাশঁখালী চট্রগ্রাম