নারায়ণগঞ্জে নিহত ৪ জনের ৩ জনই পাবনার, কারো মামলা নেই
পাবনা প্রতিনিধিঃ মোঃ সবুজ হোসেন:
নারায়ণগঞ্জে নিহত চার যুবকের মধ্যে তিনজনের বাড়ি পাবনা সদরের আতাইকুলা থানার ধর্মগ্রাম মধ্যপাড়ায়। স্থানীয় থানায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহতদের মধ্যে পাবনার তিনজন হলেন ধর্মগ্রাম মধ্যপাড়ার ফারুক খোন্দকার ওরফে ফারুক হোসেন (৩৫), সবুজ সরদার (৩০) ও জহিরুল ইসলাম (৩৫)।
নিহত আরেকজন হলেন মাইক্রোবাস চালক লুৎফর রহমান মোল্লা (৩৭)। তিনি ঢাকার রামপুরায় থাকতেন।
রোববার ভোরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুইপাশে দুটি করে মোট চারটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় এক রাউন্ড গুলিসহ দুটি পিস্তল এবং একটি মাইক্রোবাস পাওয়ার কথা জানায়।
এ ঘটনায় রোববার গভীর রাতে আড়াইহাজার থানার এসআই রফিকউল্লাহ ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ ব্যক্তিদের আসামি করে দণ্ডবিধি ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করেছেন একই থানায়।
নিহতদের স্বজনদের দাবি, তাদের একজন পনেরো বছর ধরে ঢাকায় বাস চালাচ্ছিলেন। অন্য দুজন আতাইকুলায় বেকারিতে কাজ করতেন।
এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকার পরও কেন হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন তা বুঝতে পারছেন না স্বজনরা। তারা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন।
নিহত ফারুক খোন্দকারের স্ত্রী নাজমা খাতুন বলেন, “তার স্বামী পনেরো বছর ধরে গাউছিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস করতেন এবং গ্লোরী এক্সপ্রেসের একটি বাস চালাতেন। ১০ দিন আগেও তিনি বাড়ি এসেছিলেন। তিনি সেখানে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন; তবুও আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন।”
ফারুকের মা রাজেদা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার একমাত্র সন্তানকে এভাবে কারা হত্যা করেছে, আমি তার বিচার চাই। আমার ছেলে কোনো দিন কারোর সাথে খারাপ ব্যবহারও করেন নাই, আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
সবুজের মা আমবিয়া খাতুন বলেন, “আমার ছেলে এখানকার আজাদ বেকারিতে কাজ করত। বেড়ানোর কথা বলে গত সোমবার তার দুই খালাত ভাই লিটন ও জহুরুলের সাথে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে তারা আমাদের জানায় যে, ওরা ফারুকের বাসায় গিয়ে উঠেছে। হঠাৎ সেই বাড়ি থেকে সাদা পোশাক পরা ডিবি পুলিশের পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যায়। তবে কারা কেন তাদের তুলে নিয়ে যায়, আমরা কিছুই বলতে পারছি না।
“আমার ছেলে তো কোনো ধরনের অপকর্মে জড়িত নয়, কেন কীভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে কিছুই জানি না।”
সবুজের স্ত্রী ছুম্মা খাতুন এক বছরের সন্তানকে নিয়ে আহাজারি করছেন। বলেন “আমার স্বামীকে কারা হত্যা করেছে। সে তো বেকারিতে কাজ করত; শুধু বেড়ানোর কথা বলেই বাড়ি থেকে বের হয়েছে।”
এলাকার আলাউদ্দিন বলেছেন, এরা সবাই হত দরিদ্র লোক, সবাই ছোট ছোট কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তারা বেকারিতে কাজ করতেন। মাঝে মধ্যে রিকশা ভ্যানও চালাতেন।
“বেড়াতে গিয়ে কেন তারা এই ধরনের হত্যাকান্ডের শিকার হলেন আমাদের বোধগম্য নয়। তবে যতটুকু শুনেছি তারা ঢাকায় ফারুকের বাসায় গিয়ে ওঠেন। ফারুকের স্ত্রী প্রথমে আমাদের জানান যে, সাদা পোশাকের লোকজন তাদের ধরে নিয়ে গেছে। তারপর ফারুকের গাড়ির মহাজন শাহফুজের মোবাইলে কথা বললে তিনি আমাদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।”
এ বিষয়ে আতাইকুলা থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, “আমার থানায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ নেই, তবে তারা এলাকায় থাকতেন না। ঢাকা নারায়নগঞ্জ ও তার আশপাশে তারা বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াতেন বলে আমরা শুনেছি। তবে কীভাবে তারা মারা গেছেন বিষয়টি আমার জানা নেই।”
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ পলাশ শিকদার