মোঃসজিব,বিশেষ প্রতিনিধি ভোলাঃ বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপজেলা ভোলার সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে ভেঙে পড়েছে ভোলা জেলার সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা। জেলার ২০ লাখ মানুষের জন্য বর্তমানে ৫৬ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছে মাত্র ১১ জন চিকিৎসক।নেই কার্ডিওলজী কনসালটেন্ট, সার্জারী কনসালটেন্ট, প্যাথলজীস্ট, রেডিওলজীস্ট সহ নেই কোন মেডিক্যাল অফিসার। সব মিলিয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে উপকূলীয় জেলা ভোলার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারন মানুষ। এতে চরম দুর্ভোগে পরেছে স্থানীয়রা। তাই দ্রুত চিকিৎসক সংকট সমাধান না করলে স্বাস্থ্যসেবা যে কোন সময় ভেঙে পরতে পারে বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা। আর হাসপাতাল পরির্দশন করতে এসে বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন অচিরেই চিকিৎসক সংকট সামাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপকূলীয় জেলা ভোলার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ভোলা সদর হাসপাতাল। ১৯৯৮ সালে হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নিত করা হলেও বাড়েনি এর জনবল। ৫০ শয্যার জনবল জনবল দিয়েই চলে আসছে চিকিৎসা কার্যক্রম। বর্তমানে হাসপাতালে ৫৬টি পদের বিপরীতে বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ১১জন । চিকিৎসকের পদের মধ্যে ৪৫টি শূন্য রয়েছে।বিশেষ করে নেই কার্ডিওলজী কনসালটেন্ট, সার্জারী কনসালটেন্ট, প্যাথলজীস্ট, রেডিওলজীস্ট সহ গুরুত্বর্পন বিভাগগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কোন চিকিৎসক নেই। এমনকি নেই মেডিক্যাল অফিসারও। সরকারি হাসপাতালে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করলেও মেলেনা চিকিৎকের এর দেখা।এতে একদিকে যেমন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রোগীরা অন্যদিকে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়ছে। আবার যারা এই হাসপাতালে পদায়ন হলেও এইখানে যোগদেনা অনেকেই। এছাড়াও নার্সসহ অন্যান্য জনবলেও তীব্র সংকট রয়েছে। সব মিলিয়ে অনেকটা নাজুক জেলার স্বাস্থ্যসেবা।
রোগীদের অপারেশনের জন্য উচ্চমূল্যে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে ঢাকা কিংবা বরিশাল। এতে মাঝে মধ্যেই রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ফলে দরিদ্র রোগীরা পড়ছেন চরম সংকটের মধ্যে।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী সালমা বেগেম বলেন,গর্ভবতী মহিলা বেশী বিপাকে পড়ছেন। তাদের চিকিৎসা হচ্ছেনা হাসপাতালে। বিশেষ করে সিজারিয়ান অপারেশন করতে হচ্ছে কিনিকগুলোতে। আর জটিল অপারেশ করতে হচ্ছে ভোলার বাইরে থেকে।
রোগীর স্বজন নাজনিন আক্তার বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী আসলেও তাদের রেফার করা হয়। যারা দরিদ্র
যারা দরিদ্র রোগী তাদের দুর্ভোগের সিমা থাকেনা।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাংবাদিক সহিদ তালুকদার বলেন,ভোলার ২০লাখ মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র ভোলা সদর হাসপাতাল। এ সদর হাসপাতালে দিনের পর দিন কোন অপারেশন হয়না। ডাক্তার এর অভাবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা মারাত্মক ঝুকিঁর মধ্যে পরেছে। সম্প্রতি হাসপাতালে ইলিশা থেকে আসা সাপেঁ কাটা এক রোগী ব্যাকসিন এর অভাবে মারা গেছে।
তিনি বলেন, ভোলাবাশির সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি হচ্ছে নদী বেশিষ্ট জেলা। তাই আমাদের জোর দাবী সরকারের কাছে হাসপাতালে যেন পর্যাপ্ত সংখ্যাক চিকিৎসক এর ব্যবস্থা করা হয়
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকতা ডা: তৈয়বুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ১০০ শয্যায় হাসপাতাল হলেও ভর্তি হয় গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ জন। আর আউট ডোরে চিকিৎসা নিতে আশে প্রতিদিন ৫০০-থেকে ৬০০ জন। এতো রোগীর সেব দিতে গিয়ে ডাক্তার নার্স হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই অচিরেই ডাক্তার পদায়নের দাবী জানিয়েছেন ।
তবে ভোলা সিভিল সার্জন ডা:রথীন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন,ডাক্তার সংকটের কারনে বিরম্বনার কথা স্বীকার করেছেন। তবে ভোলা বিচ্ছিন্ন জেলা হওয়াতে অনেক ডাক্তার এখানে পদায়ন হলেও এখানে আসতে চায়না। তারপরেও আমরা মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে দিয়ে চিকিৎসক সংকট নিরসনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া ২৫০ শয্যায় উন্নিত করা গেলে কিছুটা সংকট নিরসন করা যাবে।
আর হাসপাতাল পরির্দশন করতে এসে বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, অচিরেই চিকিৎসক সংকট সামাধান সহ হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নিত করা হবে।
উল্লেখ্য, ভোলা জেলায় ৭টি উপজেলায় চিকিসৎকের ২০৯টি পদ থাকলেও ১৫২টি পদশূন্য রয়েছে। মাত্র ৫৭ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে পূরো জেলার চিকিৎসা কার্যক্রম।