একদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ অন্যদিকে দলের নেতাকর্মীদের দলে ধরে রাখতে দোটানায় বিকল্পধারা বাংলাদেশের নেতৃত্ব। ফলে দেশীয় রাজনীতিতে এখন নানা সমীকরণে একাদশ নির্বাচনের সন্নিকটে আলোচিত রাজনৈতিক দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ ভেঙে যেতে পারে বলেও সুর বাজছে।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বাদ পড়ে দলটিকে যেন কঠিন সময়ও পার করতে হচ্ছে। অবশ্য দলটির কোনো কোনো নেতা এখনো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যেতে হাল ছাড়েননি।
আর তাদের মনে নতুন করে আশার আলোর সঞ্চার যুগিয়েছে হঠাৎ বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি. চৌধুরী) বাসায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছুটে যাওয়াকে ঘিরে। যদিও সাক্ষাৎ শেষে বি. চৌধুরী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
১৫ অক্টোবর, সোমবার রাতে বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার বাসায় যান গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সোমাবার রাতে সাক্ষাৎ শেষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘কেউ বাদ পড়বে না। আগে যারা ছিল সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে কিছু হয় নাকি? আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।’
বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ বিকল্পধারার সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও দলের মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর মান্নানের সঙ্গেও কথা বলেছেন। আমিও কিছুক্ষণ ছিলাম সেখানে।
১৩ অক্টোবরের ঘটনার জন্য ডা. জাফরুল্লাহ দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে বি. চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তারা থাকতে পারেনি। এটা ভালো বা সঠিক হয়নি। এই কথাটি বলতে এসেছেন তিনি। এরপর আবারও একই আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বি. চৌধুরী বলেছেন, এবার আমাদের মাফ করবেন। হতেই পারে রাজনীতিতে আপনাদের এক রকম মত থাকবে, আমাদের আরেক রকম মত থাকতে পারে।’
‘আমরা ওনাকে বলেছি যে, আমাদের মত স্পষ্ট যে, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে কোনো ঐক্যে যাব না। এ ছাড়া যদি ক্ষমতার ভারসাম্যই না আসে, নির্দিষ্টভাবে একটি দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্যই যদি ঐক্য হয়, সেটা দেশকে স্বেচ্ছাচারমুক্ত করবে না।
সুতরাং আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সরতে পারব না। তখন ডা. জাফরুল্লাহ বলেছেন, ওই দিন আমাদের ভুল হয়েছে। এ জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তখন আমরা বলেছি, এই ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কিছু নেই। তবে আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাফল্য কামনা করি। ড. কামাল হোসেনের সাফল্য কামনা করি। আপনারা নিজেদের মতো চলতে থাকুন। আমরা আমাদের মতো চলব।’
এদিকে শীর্ষ নেতাদের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত ও যথাযথ প্রাপ্তি সম্মান না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে দলটির একাংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই এ অংশের নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিকল্পধারা বাংলাদেশ থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিতে যাওয়া একাধিক নেতা প্রিয়.কমকে এ তথ্য জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল প্রিয়.কমকে বলেন, ‘বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ইতিবাচক। তবে বাবার নাম ব্যবহার করে মাহী বি. চৌধুরীর একক সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়া হয়নি।
আমি মনে করছি, এটি একটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত হয়েছে। বি. চৌধুরীর রাজনৈতিক দুর্দিন থেকে শুরু করে একসঙ্গে থেকেছি অথচ এবার দেখলাম অর্থের খেলায় রাজনৈতিক অর্বাচিন পুত্রের কাছে কীভাবে একজন পিতার অসহায় আত্মসমর্পণ হয়।’
কবে নাগাদ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিচ্ছেন—এমন প্রশ্নে শাহ আহমেদ বাদল বলেন, ‘শুধু আমি একা নই, বিকল্পধারা বাংলাদেশে বর্তমানে যে ২৫ জন সদস্য সক্রিয় নেতা জড়িত, তার মধ্যে অনন্ত ১৫ থেকে ১৮ জন আমরা একত্রে চার-পাঁচ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করব।’
কী কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন এবং কী কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন—এ প্রসঙ্গে শাহ আহমেদ বাদল বলেন, ‘বহিষ্কারের কথা বলতে গেলে অনেক কথাই বলতে হয়। যেহেতু রাজনীতি করি তাই যেমন সবকিছু ইচ্ছে হলেই বলা যায় না, তেমনি কিছু কথা না বলেও উপায় নেই।’
‘বাস্তবতা হচ্ছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত দলের প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরীর নয়। এটা তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরীর ইচ্ছাপূরণের সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য মাহী এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শুধু তা-ই নয়, মাহী বি. চৌধুরীর অসাংগঠনিক সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই অনেক গুণীজন দল ত্যাগ করেছেন। আবার কাউকে কাউকে অহেতুকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে, যা একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে কখনো মেনে নিতে পারি না। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
‘বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় কমিটি ৭১ সদস্যের হলেও এখন রয়েছে ২৫ থেকে ২৬ জন। এর মধ্যে কৃষিবিষয়ক সম্পাদক জানে আলম, সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবলু, যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জোবায়ের,
প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী জুন্নু, কৃষক ধারার আহ্বায়ক চাষী এনামুল, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক শিপরা রহিম, সদস্য নুর মুহাম্মদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মতিনসহ ১৭ জনই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’ সংবাদ উৎস – প্রিয়.কম
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ পলাশ শিকদার