ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় বৃদ্ধ বাবাকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে মেয়েকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে আশুলিয়া টহল পুলিশ। নিহত নারীর পরিবার ওই বাসের কোনো তথ্য দিতে পারেনি। বাসটি টাঙ্গাইলের দিকে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ঘুরে উল্টো দিকে গেছে বলে বৃদ্ধ বাবার কাছ থেকে ধারণা পেয়েছে পুলিশ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ। এ ঘটনায় নিহত নারীর জামাতা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছেন।
পুলিশ ও নিহত নারীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিহত নারীর নাম জরিনা খাতুন (৪৫)। স্বামী জহির মোল্লা বেঁচে নেই। তিনি সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলায় থাকতেন। কিছুদিন আগে জরিনা খাতুনের মেয়ে একটি সন্তানের জন্ম দেন। নবজাতককে দেখার জন্য তিনি গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বৃদ্ধ বাবা আকবর আলী মণ্ডলকে (৭০) নিয়ে মেয়ের বাড়ি আশুলিয়ার গাজীরচট মুন্সিপাড়ায় বেড়াতে আসেন। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁরা সিরাজগঞ্জে যাওয়ার উদ্দেশে মেয়ের বাড়ি থেকে বের হন। জরিনা খাতুনের ভাই স্বপন সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁদের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ইউনিক বাসস্ট্যান্ডে টাঙ্গাইলগামী একটি বাসে তুলে দেন। বাসের নাম তিনি জানাতে পারেননি। বাসে ওই সময় যাত্রীর আসনে কয়েকজন বসে ছিলেন। পুরো বাসটি প্রায় ফাঁকা ছিল।
রাত আটটার দিকে জরিনা খাতুনের জামাতা নুরুল ইসলাম নানাশ্বশুর আকবর আলীর মুঠোফোনে কল দিয়ে জানতে চান, তাঁরা বাড়ি পৌঁছেছেন কি না। ওই সময় তিনি আকবর আলীর কাছ থেকে জানতে পারেন, আশুলিয়া বাজারসংলগ্ন এলাকায় সেতুর কাছে তাঁকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে বাসটি জরিনা খাতুনকে নিয়ে চলে গেছে। তিনি মেয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না। সঙ্গে সঙ্গে নুরুল ইসলাম আশুলিয়া বাজারের দিকে রওনা দেন। তিনি সেখানে গিয়ে লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন, আকবর আলী হতভম্ব হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি এর–ওর কাছে গিয়ে ঘটনার বর্ণনা করছিলেন। তিনি তাঁর পরিবার সম্পর্কেও কোনো তথ্য দিতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে সেখানে পুলিশ এসে পৌঁছায়। পরে রাত ১০টার দিকে আশুলিয়া টহল পুলিশ আশুলিয়া বাজার থেকে ৫০০ গজ দূরে মরাগাঙ এলাকায় রাস্তার পাশে জরিনা খাতুনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে।
পুলিশ জানিয়েছে, বাসটিতে যারা ছিল, তারা হয়তো যাত্রী ছিল না। যাত্রীবেশে দুর্বৃত্ত ছিল। টাঙ্গাইলগামী বাস হলেও সেটি উল্টো দিকে ঘুরে আশুলিয়া বাজারের দিকে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরাধের উদ্দেশ্যেই তা করা হয়েছে। ছিনতাই করার মতো কোনো অর্থ জরিনা খাতুন বা তাঁর বাবার কাছে ছিল না। তা ছাড়া আকবর আলীর মুঠোফোনটিও নেয়নি দুর্বৃত্তরা। সে ক্ষেত্রে জরিনা খাতুনকে ধর্ষণের উদ্দেশে বাসটি ঘোরানো হয়েছিল কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জরিনা খাতুনের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, গতকাল রাতেই জরিনা খাতুনের জামাতা নুরুল ইসলাম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ পলাশ শিকদার