রিপোটার:মোঃ সবুজ হোসেন:
১৬টি আসনে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর নাম আলোচনায় থাকলেও শেষ মুহূর্তে পাল্টে গেছে অনেক সমীকরণ। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী আসনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি তিনি। গুরুকে বাদ দিয়ে এ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন তারই শিষ্য আবু সুফিয়ান। মনোনয়ন বৈধ না হওয়ায় নিজ জন্মস্থান হাটহাজারীতে এমপি হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছে সাবেক মেয়র মীর নাছিরকে। আবার ভাতিজা দিদারুল আলমকে সীতাকুণ্ড আসনে ছাড় দিতে গিয়ে নিজের এ স্বপ্নকে বলি দিতে হয়েছে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করা সাবেক মেয়র মনজুর আলমকে। দলের জন্য সর্বোচ্চ ৭৭ মামলা হজম করলেও হেভিওয়েট প্রার্থী আসলাম চৌধুরীর কপালে জোটেনি নির্বাচন। সাকা চৌধুরীর অভাব পূরণ করতে এবার দুটি আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন তার ভাই গিয়াস কাদের চৌধুরী। কিন্তু তার মনোনয়ন মেলেনি একটিতেও। বাঁশখালী থেকে তিনবার এমপি হওয়া জাতীয় পার্টির মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীও মনোনয়ন পাননি এবার।
শুধু হেভিওয়েট প্রার্থী নন, শেষ মুহূর্তে অনেক নাটকীয়তার মুখোমুখি হতে হয়েছে চট্টগ্রামের আরও অর্ধডজন প্রার্থীকে। সন্দ্বীপ থেকে তিনবারের নির্বাচিত এমপি মোস্তফা কামাল পাশাকে এবারও মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু চূড়ান্ত মনোনয়নের আগের রাতে তাকে ঢাকায় ডেকে বলা হয়, সন্দ্বীপ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী সেলিম হায়দারই হবেন জোটের প্রার্থী। কর্মীসমর্থক নিয়ে কামাল পাশা হাজির হলেন গুলশানে। রাতভর বিনিদ্র কাটিয়েছেন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে। ভোরে সেলিম হায়দারের বদলে আবার মনোনয়ন দেওয়া হয় কামাল পাশাকে। রাঙ্গুনিয়া আসনে নির্বাচন করার কথা ছিল গিয়াস কাদের চৌধুরীর। এটিকে বিএনপির ঘাঁটি বলা হয়। কিন্তু শেষ দিন এ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন ভাগিয়ে নিয়েছেন এলডিপির প্রার্থী নুরুল আলম।
এ প্রসঙ্গে নুরুল আলম বলেন, 'রাঙ্গুনিয়াতে আগেও এমপি হয়েছি। এখানে আমার স্বতন্ত্র একটি ইমেজ রয়েছে। বিএনপির শক্তিশালী কোনো প্রার্থী ছিলেন না এখানে। তাই সব দিক বিবেচনা করে আমার ওপর আস্থা রেখেছে জোট। আশা করছি বিজয়ী হয়ে আস্থার প্রতিদান দিতে পারব আমি।'
সন্দ্বীপে বিএনপির প্রার্থী মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, 'তিনবার সন্দ্বীপে এমপি নির্বাচিত হয়েছি। এখানকার মাটি বিএনপির ঘাঁটি। মনোনয়ন নিয়ে অনেক নাটকীয়তা হলেও শেষ পর্যন্ত আমার ওপরই আস্থা রেখেছে দল। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এই আসনে বিজয়ী হব আবার।'
মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক মেয়র মনজুর আলম বলেন, 'আমাদের পরিবার থেকে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সীতাকুণ্ডে আমার ভাতিজা ফের নৌকার মনোনয়ন পেয়েছে। এটাই আমার বিজয়। ভাতিজার জন্য ছাড় দিয়েছি আমি।'
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসন থেকে একাধিকবার এমপি হয়েছেন বিএনপির মোর্শেদ খান। এখান থেকে এমপি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও হয়েছেন তিনি। এবার এই আসনে নানা কারণে নতুন মুখ বেছে নিয়েছে বিএনপি। তার মনোনয়ন বৈধ হওয়ার পরও তাকে প্রার্থী না করে কেন তারই শীষ্য আবু সুফিয়ানকে প্রার্থী করা হলো তা নিয়ে চলছে আলোচনাও। আবু সুফিয়ান নগর বিএনপির সহসভাপতি। ধানের শীষ প্রতীকে এটি প্রথম নির্বাচন হবে তার।
চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনে লায়ন আসলাম চৌধুরী, সাবেক আইজিপি এওয়াইবি সিদ্দিকী ও আসলাম চৌধুরীর ভাই ইছহাক চৌধুরীকে মনোনয়ন চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। আসলাম চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় তার ভাই উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইছহাক চৌধুরীর ওপরই আস্থা রেখেছে বিএনপি। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবারই প্রথম নির্বাচন করবেন তিনিও। চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী আসনে মনোনয়ন পেতে মাঠে ছিলেন সাবেক মেয়র মীর নাছির ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল।
কিন্তু বাপ-বেটার কারোরই পূরণ হচ্ছে না নির্বাচনের স্বাদ। কারণ শেষ পর্যন্ত এ আসনটিতে মনোনয়ন পেয়েছেন জোটের শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম। চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনে মনোনয়ন চিঠি পাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা ছিল চারজন- ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, আলহাজ সালাহউদ্দিন, কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার ও নুরী আরা সাফা। এখান থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীও। তবে গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত নতুন প্রার্থী আজিম উল্লাহ বাহারের ওপরই আস্থা রেখেছে বিএনপি। চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসন থেকে তিনবার এমপি হয়েছেন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। গতবার এই আসনে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছিল তাকে, কিন্তু সেবার নির্বাচনে অংশ নেননি তিনি। অথচ এবার নির্বাচন করতে চাইলেও মনোনয়ন মেলেনি তার।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ পলাশ শিকদার