পিলখানা ট্র্যাজেডির সেই বিভীষিকাময় দিন আজ। ২০০৯ সালের আজকের এই দিনে বিজিবি কর্মকর্তাদের রক্তে ভেসে গিয়েছিল পিলখানা। পিলখানায় সাবেক বিডিআর ও বর্তমান বিজিবি সদর দপ্তরে ঘটে মর্মান্তিক নৃশংস হত্যাকাণ্ড। সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে একদল বিদ্রোহী তৎকালীন বিডিআর’র সৈনিক দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে ঢুকে যায়। অস্ত্র তাক করা হয় মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের বুকে।
এভাবেই শুরু হয় ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনার। বিডিআরের বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে রাখে। পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর বীভৎস ঘটনার সৃষ্টি করে তারা।
এ সময় তারা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সিপাহি সেলিম রেজা, কাজল আলী, আবদুল বাছেত, শামীম আল মামুন জুয়েল ও ল্যান্স নায়েক ইকরামসহ ঘাতকদের হিংস্র তাণ্ডবে সেনা পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার সাধারণ বিডিআর সদস্যের পরিবার। বিদ্রোহীদের বিচার, সংশ্লিষ্টদের সাহায্য-সহযোগিতার পরও স্বজনহারাদের কান্না থামেনি আজও। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযুক্ত ১৫২ জনকে ফাঁসির রায় দেয়া হলেও সেটি এখনো কার্যকর হয়নি।
পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ ব্যক্তিবর্গের স্মরণে শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হবে। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানাসহ বিজিবির সকল রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন এবং বিজিবির সকল মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বিডিআর বিদ্রোহে পলাতক ২২ বিডিআর সদস্য এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। এদের ধরিয়ে দিতে পারলে ২ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার। তারপরও তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য ‘অপারেশন র্যাবল হান্ট’ নামে অভিযানও চালানো হয়েছে। পলাতকদের মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সে এই ১৪ জনের আপিল হয়নি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন কর্মকর্তা জানান, পলাতক ২২ বিডিআর সদস্যকে গ্রেপ্তারে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
পলাতক ২২ জনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিপাহি মইন উদ্দিন (নওগাঁ), বিশ্ব মিত্র বড়ুয়া (চট্টগ্রাম), আতিকুর রহমান (শরীয়তপুর), মিজানুর রহমান (শেরপুর), পুলতন চাকমা (খাগড়াছড়ি), কামরুল হাসান (লক্ষ্মীপুর), নূরুল ইসলাম (কক্সবাজার), হামিদুল ইসলাম (ফরিদপুর), হাসিবুর রহমান (শেরপুর), আনিসুর রহমান (সিরাজগঞ্জ), ফরহাদ হোসাইন (নওগাঁ), আল মামুন (সাতক্ষীরা), নজরুল ইসলাম মল্লিক (বরিশাল) ও সাদুল্লাহ (কক্সবাজার)। বাকিরা হলেন- রেজাউল করিম (চট্টগ্রাম), বাকী বিল্লাহ (নীলফামারী), মুকুল আলম (গাইবান্ধা), মেজবাহ উদ্দিন (চট্টগ্রাম) কামরুল ইসলাম (খুলনা), মোহাম্মদ সেলিম (চট্টগ্রাম), মিজানুর রহমান (চট্টগ্রাম) ও মকবুল হোসেন (লালমনিরহাট)।
বিডিআর বিদ্রোহে শহীদদের স্মরণে আজ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। শহীদদের রুহের মাগফিরাতের জন্য পিলখানাস্থ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরসহ সকল রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কোরআন, বিজিবির সকল মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
পরদিন বিকাল পৌনে ৫টায় পিলখানাস্থ কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া স্বরাষ্ট্র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদ ব্যক্তিবর্গের নিকটাত্মীয়রা, পিলখানায় কর্মরত সকল অফিসার, সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করবেন।