নিজস্ব প্রতিনিধি, সানি তপদার
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে উপকূলের আবহাওয়ায় পরির্বতন শুরু হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে উপকূলীয় জেলা খুলনা, পটুয়াখালী, বরগুনা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়া বইছে। কোথাও কোথায় গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে নদীগুলোতেও।
ঘূর্ণিঝড়টি মূল অংশ সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গতকাল পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দরে দেয়া ৭ নম্বর বিপদসংকেত আজও বহাল রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজারে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতও বহাল রাখা হয়েছে।
৪৩ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। আঘাত হানার সময় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসসহ ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ার সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ। এরপর সারারাত পুরো বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে, দমকা বাতাসে সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ।
আমাদের পটুয়াখালী প্রতিবেদক জানান, ফণীর প্রভাবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই কুয়াকাটাসংলগ্ন সাগরে উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি হয়। সৈকতে আছড়ে পড়ে বড় বড় ঢেউ। ইতোমধ্যে গভীর সমুদ্র থেকে মাছধরার ট্রলার ও নৌকাগুলো তীরে ফিরতে শুরু করেছে।
শুক্রবার সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি শুক্রবার রাত তিনটায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৩০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬৫ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৯৫ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার বিকালে দিকে ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও কাছাকাছি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। খুলনা ও কাছাকাছি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। অপরদিকে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহওয়া বিভাগ।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে কিংবা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। আবহাওয়ায় অধিদপ্তর থেকে সতর্ক সংকেত জারি করার পর থেকেই উপকূলজুড়ে ঘূর্ণিঝড় ফণী নিয়ে চলছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।