দুদক কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে গোটা কমিশনকেই
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের এক পরিচালক একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন, এই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু হবার পর আবারও প্রশ্ন উঠেছে - দুর্নীতি দমনের জন্য কতটা কাজ করছে এই কমিশন?
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই দুর্নীতি দমন কমিশন কখনোই বিতর্ক মুক্ত হতে পারেনি।
পুলিশের সাবেক একজন ডিআইজি অভিযোগ তুলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন পরিচালক তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারো আলোচনায় এসেছে কমিশন।
প্রশ্ন উঠছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ? কমিশনের তদন্ত কর্মকর্তা চাইলেই কি তাঁর ইচ্ছেমতো ঘুষের বিনিময়ে কাউকে রেহাই দেয়া কিংবা কাউকে ফাঁসিয়ে দেবার সুযোগ আছে?
দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ নিয়ে বিস্মিত হননি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
ড. জামান বলেন, " এটা যে আসলে খুব প্রকট একটা বিষয়, সাম্প্রতিক ঘটনা সেটা প্রমাণ করে।" তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার আগে যখন দুর্নীতি দমন ব্যুরো ছিল তখন থেকেই সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।
সংস্থাটির নাম এবং আইন পরিবর্তন মাধ্যমে কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হলেও সে ছায়া এখনো রয়ে গেছে বলে অনেকে মনে করেন।
সেজন্য ড. জামান বলেন, "এটা যে একেবারেই অবাক করে দেয়ার মতো ঘটনা অনেকের কাছে, আমি কিন্তু মোটেও অবাক হইনি।"
কোন ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রেহাই দেয়া, কিংবা কেউ ঘুষ না দিলে তাকে দুর্নীতির অভিযোগ ফাঁসিয়ে দেবার যথেষ্ট ক্ষমতা দুর্নীতির দমন কমিশনের তদন্ত কর্মকর্তার হাতে রয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘটনাকে কিভাবে সাজিয়ে দিচ্ছেন সেটির উপর অনেক কিছু নীর্ভর করে বলে মনে করেন ড. জামান।
"যে তথ্যটা সংগ্রহ করা হচ্ছে অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায়, সে তথ্যগুলোকে কিভাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা সাজিয়ে দিচ্ছেন, তার উপর ভিত্তি করে দুদকের কমিশনারগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। "
দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কর্মকর্তারা যেভাবে তদন্ত করে চার্জশীট আদালতে জমা দেন, সেটির উপর ভিত্তি করে মামলার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কর্মকর্তাদের তদন্তের উপর ভিত্তি করে কমিশনের আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম আমাদের বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা যে প্রতিবেদন তৈরি করেন, সেটি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্বারা অনুমোদিত হতে হয়।
মি: আলম বলেন, তদন্তে সন্দেহজনকভাবে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হলো কী না - সে বিষয়টি পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে কমিশনে।
"কমিশন দেখভাল করেই কিন্তু স্যাঙ্কশন (অনুমোদন) দেয়। আপনি ডিআইজি মিজানের কথাটাই ধরুন, সে রিপোর্ট কিন্তু এখনো কমিশনের কাছে আসেনি। কমিশনের কাছে আসলে কমিশন দেখতো," - বলছিলেন মি: আলম।
তিনি বলেন, এরপর কমিশন সেটি গ্রহণ করতে পারতো আবার নাও করতে পারতো।
দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অধিকাংশ সময় দেখা যায়, দুর্নীতির শাস্তি হিসেবে হয়তো সাময়িক বরখাস্ত নতুবা বদলি করা হয়। একেবারে চরম পরিস্থিতিতে চাকুরী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কিন্তু এসব পদক্ষেপ কখনোই দুর্নীতির জন্য যথাযথ শাস্তি হতে পারেনা বলে মনে করেন ড. জামান।
"যারা ঘুষ লেনদেন করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করেছেন, তারা ঐ অবস্থানগুলোকে এনজয় (উপভোগ) করেন।"
তিনি বলেন, কমিশনের যেসব কর্মকর্তা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে - তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া জরুরী।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ পলাশ শিকদার