নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
নিজ অফিস কক্ষে একই অফিসের এক নারী অফিস সহায়কের সাথে আপত্তিকর ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল এবং এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় জনরোষের আতংকে ও লজ্জায় ডিসি আহমেদ কবীর গভীর রাতে জামালপুর ত্যাগ করেছেন। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ পাহারায় তিনি তার সরকারি বাসভবন থেকে চলে গেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানায়।
এদিকে আপত্তিকর ভিডিও এর সেই আলোচিত নারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি আজ রোববার সকাল থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার।
জানা গেছে, আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীরকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। এ বিষয়ে আজ রোববার সকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া জামালপুরের নতুন ডিসি নিয়োগের পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ এনামুল হককে জমালপুরের নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আজ রোববার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কে.এম. আল-আমীন এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। এদিকে বদলি এবং নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগের দু’টি আদেশপত্রই হাতে পেয়েছেন জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার। তিনি রোববার দুপুরে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আলোচিত সেই অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা আত্মগোপনে রয়েছেন। শুক্র ও শনিবার দু’দিনের সাপ্তাহিক ছুটির পর অফিস খুললেও ওই অফিস সহায়ক রোববার তার কর্মস্থলে যোগদান করেননি। তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে আহমেদ কবীরকে তার জেলা প্রশাসকের পদ থেকে প্রত্যাহার করার আদেশপত্র হাতে পাওয়ার আগেই শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ পাহারায় তিনি তার সরকারি বাসভবন ত্যাগ করেছেন।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা রাজস্ব বিষয়ক মাসিক সভায় তার সভাপতিত্ব করার কথা ছিল। এ সংক্রান্ত ব্যানারেও তার নাম লেখা ছিল। আহমেদ কবীরের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই মাসিক সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় জেলার সাতটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি বিভাগের সহকারী কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।
রোববার সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে সমস্ত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটা নীরবতা লক্ষ্য করা গেছে। এডিসি পর্যায়ে কর্মকর্তা এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের বারবার বৈঠক করাসহ ব্যস্ততা এবং ইতস্ততার মধ্য দিয়ে সময় পার করতে দেখা গেছে। বিশেষ নিরাপত্তার জন্য ডিসি অফিস প্রাঙ্গণ ও আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সেখানে দমকল বাহিনীর গাড়ীও অবস্থান করছিল। জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের ওএসডি এর খবর জানাজানি হলে উৎসুক মানুষ ডিসি অফিস প্রাঙ্গণে ভিড় করে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় ভবনের নিচ তলায় সিঁড়ির পাশের দেয়ালে ভিক্ষুকমুক্তকরণের উদ্বুব্ধমূলক ভিডিও তথ্যচিত্র প্রচারের এলইডি টিভি সেটটিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ওই তথ্যচিত্রের একাংশে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের বক্তব্য রয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ঢুকতেই ওই ভিডিও তথ্যচিত্রটি দেখতে দর্শনার্থীদের সারাদিনই ভিড় থাকতো। ধারণা করা হচ্ছে যে, জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ওই টিভিসেটটি জনরোষের শিকার হওয়ার শঙ্কা থেকেই টিভিসেটটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার টিভি সেটটি নামিয়ে রাখার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া আহমেদ কবীরের সেই আলোচিত কক্ষ থেকে গত শুক্রবার রাতে খাট-বিছানা ও অন্যান্য আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে, এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর ওই কক্ষটি যেভাবে সাজিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই আছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই কক্ষটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি কাজ করবে বলে জানানোর পর থেকেই এই ব্যবস্থা নিয়েছি।