আশুলিয়া প্রতিনিধি ॥ শনিবার সন্ধায় রাজধানীর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তÍপুর এলাকার তোবা গ্রুপের তাজরিন গার্মেন্টস এর অগ্নিকান্ডের সাত বছর পুর্তি উপলক্ষে ওই ঘটনায় নিহত ১১৩ জন শ্রমিকের স্বরনে কারখানাটির সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেছে নিহতদের স্বজন ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহতদের স্বরণে ১১৩ টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। এ সময় নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে এলাকার পরিবেশ। এছাড়া নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়ার আয়োজন করা হয়।
এর আগে কারখানাটির সামনে আয়োজিত এক পথসভায় শ্রমিক নেতারা ৬ দফা দাবি জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
সভায় শ্রমিক নেতারা ৬ দফা দাবী বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে বলেন, তাজরিন ও রানা প্লাজা সহ সারাদেশের সকল কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ সকল শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আইএলও কনভেনশন ১১২ এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা আইনের ১৮৫৫-এর ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। এছাড়া আহত ও ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। ঝুঁকিপুর্ন কর্মক্ষেত্রসমূহ পরিদর্শনে দেশব্যাপী মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং সবার জন্য নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে পরিদর্শন ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে।
নেতারা আরো বলেন, শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট ও বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সকল শ্রমিককে বীমার আওতায় আনার ও উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। এছাড়া কর্মক্ষেত্রের সকল দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িত দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল, বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিকলীগের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১১৩ জন শ্রমিক জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। এছাড়া জীবন বাঁচাতে লাফিয়ে পরে পঙ্গুত্ব বরন সহ মারাত্বক আহত হন দুই শতাধিক শ্রমিক। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির নয়তলা ভবনের ছয়তলা পর্যন্ত ভষ্মিভুত হয়ে যায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে তৈরী পোশাক কারখানায় অগ্নিকান্ডে একসঙ্গে এত পরিমান শ্রমিকদের হতাহতের ঘটনা এটাই প্রথম। পরে ২৭ নভেম্বর মঙ্গলবার দিনটি শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।