ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পূর্ববঙ্গে একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। সিলেটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগমনের শতবর্ষ উপলক্ষে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উত্থাপন করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল সুগভীর। পূর্ববঙ্গে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হোক, এটি রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জসীমউদদীন, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রমুখকে শিক্ষকতা করতে তিনি পাঠিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য বেশ কিছু লেখাও তিনি প্রেরণ করেন।
অধ্যাপক বলেন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্ররা রবীন্দ্রনাথকে তাদের ছাত্রসংসদের ‘আজীবন সদস্য’ পদ প্রদান করে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রবীন্দ্রনাথকে ডি.লিট. উপাধিও দেন। ফলে রবীন্দ্রনাথ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ। আজ যারা বলার চেষ্টা করে যে, রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন, এই অভিযোগ পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্র-বর্জনকালেও কে্উ তুলতে পারে নি। এই অভিযোগ তোলা হয় একবিংশ শতাব্দীর সূচনাতে, যা অতীব দুঃখজনক। অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর প্রমাণ উপস্থাপন করেন এই বলে যে, গড়ের মাঠে যে সভায় রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন বলে বলা হয়, সেদিন রবীন্দ্রনাথ আসলে শিলাইদহে ছিলেন– রচিত গানের নিচে দেয়া তারিখে সে সত্যই মেলে।
১৯১৯ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটে আগমন করেন। তারই শতবর্ষ উপলক্ষ্যে গত ৫ থেকে ৮ই নভেম্বর সিলেটে চার দিন ব্যাপী ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রবন্ধ উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বেলা দাস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেক সাদি প্রমুখ।
প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী ও সিলেটের মদনমোহন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. ফতে ফাত্তাত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সেক সাদি ‘রবীন্দ্র-নন্দনভুবনে পূর্ববঙ্গ’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, রবীন্দ্ররচনার অনেক চরিত্র রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গে না এলে সৃষ্টি করতে পারতেন না। পূর্ববঙ্গ থেকে গৃহীত ব্যক্তি-অভিজ্ঞতার চমৎকার রূপায়ণ ঘটেছে রবীন্দ্রনাথের লেখায়। এই আন্তর্জাতিক সেমিনার ছাড়াও সিলেটে রবীন্দ্র-আগমন উপলক্ষ্যে চার দিনব্যাপী সিলেটের নানাস্থানে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হয়, যেখানে দেশ-বিদেশের জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গ, শিল্পীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।