নিউজ ডেস্কঃসম্প্রতি করোনা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত একটি বহুল আলোচিত রোগ। এই আলোচিত রোগটি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে সোনারগাঁয়ে ফুটপাথে কাজ করছে ব্লাড ফর নারায়ণগঞ্জের একঝাঁক তরুণ। এটি মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন পশু, বিড়াল, উট ও বাদুড়ের মধ্যে দেখা যায়।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল ৫ টায় সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের মোগরাপাড়া ফল মার্কেট ও ফুট ওভার ব্রীজের আশেপাশে মাস্ক ও শীতবস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে জনসাধরনের মাঝে রহস্যজনক ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী করেন।
সাধারণত প্রাণিদেহে সংক্রমিত করোনা ভাইরাসগুলি মানুষকে আক্রান্ত করে না। সম্প্রতি চীনের উহান নামক একটি শহরে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বর্তমানে শনাক্তকৃত বেশির ভাগ রোগী উহান শহরের একটি সামুদ্রিক খাবার ও পশুর বাজার থেকে আক্রান্ত হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত এই রহস্যজনক ভাইরাস থেকে ২ হাজার ৭৪৪ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮১ জন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশই চীনের হুবেই প্রদেশের অন্তর্গত উল্লিখিত উহান শহরের কোনো না কোনোভাবে ভ্রমণ করেছিলেন, নয়তো সেখানকার বাসিন্দা। এছাড়া চীনে ভ্রমণজনিত কারণে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, হংকং, মেকাউ, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ ১৩টি দেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
এসময় ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেন ব্লাড ফর নারায়ণগঞ্জের সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, সোনারগাঁয়ের মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই এই ক্যাম্পেইন। সবাই সচেতন হোক এই প্রত্যাশায় আমরা জনগনের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মাস্ক, লিফটলেট ও শীতবস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সোনারগাঁয়ের মানুষকে সচেতন করছি।
ব্লাড ফর নারায়ণগঞ্জ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনামূলক ক্যাম্পেইনে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁও ইবনে সিনা হাসইপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাইম ও ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান প্রমূখ।
চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এই ভাইরাসটি কতটা ভয়ংকর এবং কীভাবে ছড়ায়, তা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তার অনুবাদ লাইভ সোনারগাঁয়ের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল……
করোনা ভাইরাস কী?
করোনা ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটি এক ধরনের করোনা ভাইরাস। ভাইরাসটির অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতোমধ্যে ‘মিউটেট করছে’, অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে। ফলে এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। সোমবারই বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন, এ ভাইরাস একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে।
কতটা ভয়ংকর এই ভাইরাস
এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। তবে এর পরিণামে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের দুই শতাংশ মারা গেছেন, হয়তো আরও মৃত্যু হতে পারে। তাছাড়া এমন মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে যা চিহ্নিত হয়নি। তাই এ ভাইরাস ঠিক কতটা ভয়ংকর, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এক দশক আগে সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও ছিল এক ধরনের করোনা ভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজারের বেশি মানুষ। আর একটি ভাইরাসজনিত রোগ ছিল মিডল ইস্টার্ন রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা মার্স। ২০১২ সালে এতে মৃত্যু হয় ৮৫৮ জনের।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ পলাশ শিকদার