(আসজাত সারোওয়ার খাঁন)
রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ধর্ষণের শিকার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সেই ছাত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন ওই ছাত্রী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।
তিনি জানান, মেয়েটি সব ধরনের ট্রমা ও সমস্যা কাটিয়ে এখন সুস্থ আছে। তাই বোর্ড চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পরবর্তীতে কোনো সমস্যা হলে তাকে আবারও আসতে বলা হয়েছে।
হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে ওই ছাত্রীর বাবা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশবাহিনী ও ঢামেক কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি দিয়ে গেছেন বলে জানান ঢামেকের পরিচালক।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে ভুল করে কুর্মিটোলা বাস স্ট্যান্ডে নামেন। সেখান থেকে তার গন্তব্যে যাওয়ার পথটি নির্জন ছিল। পথে তাকে অনুসরণ করে মজনু। একপর্যায়ে তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরে ঝোঁপের আড়ালে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবি ক্যাম্পাস। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়েও। ঘটনার চারদিনের দিনের মাথায় বুধবার মজনুকে আটক করে র্যাব।
এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার ‘ধর্ষক’মজনুকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনছারী এ আদেশ দেন। এর আগে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পুলিশ পরিদর্শক আবু সিদ্দিক আসামিকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানান। বাদীর পক্ষের ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু, আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান, মো. নিজামুল হক, গোলাম মোস্তফা খান, ইকবাল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলমসহ প্রমুখ রিমান্ড পক্ষে শুনানি করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
মজনুর রিমান্ড আবেদন বলা হয়, গত ৫ জানুয়ারি ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ফুটপাত দিয়ে ৪০/৫০ গজ সামনে আর্মি গলফ ক্লাব মাঠ সংলগ্ন স্থানে ভিকটিম পৌঁছালে আসামি পেছন দিক থেকে গলা চেপে ধরে। ভিকটিম চিৎকার করতে গেলে তাকে কিল-ঘুষি ভয়ভীতি দেখালে ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন আসামি মজনু ভিকটিমকে ধর্ষণ করে।
গত ৮ জানুয়ারি ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন শেওড়া রেল ক্রসিং থেকে আসামিকে গ্রেফতার করে। আসামির স্বীকারোক্তি মোতাবেক ভিকটিমের ব্যাগ মোবাইল ও পাওয়ার ব্যাংক আসামির ব্যবহৃত একটি জিন্সের প্যান্ট ও একটি জ্যাকেট জব্দ করে র্যাব। এরপর র্যাব-১ আসামিকে ডিবি পুলিশে হস্তান্তর করেন। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এবং ধর্ষণের বিষয় স্বীকার করে। সে একজন অভ্যাসগতভাবে ধর্ষণকারী। আসামি বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধী, পাগল, ভ্রাম্যমাণ মহিলার সঙ্গে তাদের সম্মতি বাদে এই অনৈতিক কাজ করে আসছে। আসামি ভ্রাম্যমাণ অবস্থান থাকে। তার স্থানীয় কোনো বসবাসের জায়গা নেই। ঘটনার দিন আসামি ভিকটিমকে একা পেয়ে ফুটপাতের পাশে বন-জঙ্গলের ভেতরে ফেলে ধর্ষণ করে।
মামলাটি অন্তত স্পর্শকাতর ও চ্যঞ্চল্যকর মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটনসহ আসামির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহরে জন্য রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন বলে রিমান্ড আবেদনে ডিবি পুলিশ উল্লেখ করে