আশিকুজ্জামান মিজান, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মচিমহা) সাত চিকিৎসক এবং ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
দু’দিনে তাদের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ায় হাসপাতালজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স, রোগী ও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীরা।
শেরপুরের নকলা উপজেলার এক অন্তঃসত্ত্বা এবং গাজীপুরের মাওনার এক গার্মেন্টকর্মী তথ্য গোপন করে চিকিৎসাসেবা নেয়ায় ময়মনসিংহ হাসপাতালে কর্মরতদের মাঝে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মচিমহার উপ-পরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার জানান, দু’দিনে হাসপাতালের ৭ চিকিৎসক ও ১৫ নার্স-আয়া-ক্লিনারসহ ২২ জন আক্রান্ত হওয়ায় আমরা চিন্তিত।
এভাবে করোনায় আক্রান্ত হতে থাকলে চিকিৎসক-নার্স খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, চিকিৎসাসেবা যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য বুধবার জরুরি বৈঠক করে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সর্দি, কাশি ও জ্বর নিয়ে হাসপাতালে না এসে ঘরে বসে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। সবাইকে ঘরে থাকারও তিনি আহ্বান জানান।
ময়মনসিংহ হাসপাতালের ১৪ নং ওয়ার্ড, ডায়ালসিস বিভাগ, আইসিইউ এবং ওয়ানস্টপসহ কয়েকটি বিভাগ লকডাউন করা হয়েছে। কর্মরতদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
এ হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমানে রোগীর সংখ্যা অনেকটা কমে এসেছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মসিউল আলম জানান, জেলায় করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নগরীর এসকে হাসপাতালের ৮০টি বেড ও ছয়টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে। বর্তমানে জেলায় আইসোলেশনে ২০ জন, হোম কোয়ারেন্টিনে ৩০৩ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ৭৪ জন আছেন।
এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র নিয়েছেন ১ হাজার ৭৪৩ জন। তিনি জানান, তথ্য গোপন করে রোগীরা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা নেয়ায় এ জেলায় করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
এসকে হাসপাতালে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের ৮ দিন ডিউটি শেষ হওয়ার পর ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে নতুন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী দিতে হচ্ছে।
ফলে আগামী দিনগুলোতে চিকিৎসক সংকটে পড়বে ময়মনসিংহ। ঘরে থাকার পাশাপাশি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য তিনি আহবান জানান।
ময়মনসিংহ জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ জনে। এর মধ্যে জেলা সদরে ৩৭ জন, গফরগাঁওয়ে ১২ জন, ঈশ্বরগঞ্জে- ছয়জন, মুক্তাগাছায় পাঁচজন, ফুলপুরে তিনজন, হালুয়াঘাটে দু’জন, নান্দাইলে দু’জন, ভালুকা, ফুলবাড়ীয়া ও ত্রিশাল উপজেলায় একজন করে রয়েছে। ইতোমধ্যে ফুলপুর ও ত্রিশাল উপজেলায় দু’জন মারা গেছে। একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিন চিকিৎসক, সাতজন স্বাস্থ্য সহকারী এবং নার্সসহ ১০ জন রয়েছে। হাসপাতালটি লকডাউন করা হয়েছে।
মোবাইল ফোনে শুধু জরুরি সেবা চালু রয়েছে। হালুয়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দু’জন চিকিৎসক এবং মুক্তাগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরেকজন চিকিৎসক আক্রান্ত থাকায় সেখানেও চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। ময়মনসিংহ জেলায় ১৩ চিকিৎসক ও ৩০ জন স্বাস্থ্যকর্মী বা স্বাস্থ্য সহায়ক আক্রান্ত হয়েছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ পলাশ শিকদার