ফার্স্ট ট্রাকের ৭ মেঘা প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছেনা ।বরাদ্দ বাড়ছে আসন্ন বাজেটে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
সরকারের অগ্রাধিকারের ৭ টি মেগা প্রকল্প নিয়ে জটিল বিড়ম্বনা যেমন ঘাড়ে চেপে বসেছে তেমনি করোনায় বদলে যাওয়া ব্যবস্থায় এর বাজেট ব্যয় -বরাদ্দ বৃদ্ধি কতটুকুন যৌক্তিক সেই বিতর্কটা সামনে এসে যাচ্ছে ।আবার বাজেট বাস্তবায়ন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এটাও বিরাট চ্যালেঞ্জ ।আসলে আগামির সব হিসেব নিকেস পালটে যাওয়া অবস্থায় এসব প্রকল্প জনগনেরর জন্য কতটুকুন আর্থসামাজিক ভাবে কাজে লাগবে।দেশের মধ্যে এবং দেশের বাইরে সম্পর্কিত স্থবির হওয়া ব্যবসা বানিজ্য ও কর্ম সংস্থানের প্রবাহ কতদিনে ঠিক হবে তা কেউ বলতে পারবে না ।আমদানি রফতানি এবং এই সম্পর্কিত বিমান ,জাহাজ ,মানুষ চলাচল কতদিনে স্বাভাবিক হবে তা বলা খুব কঠিন ।দেশের বাইরের প্রবাসী শ্রমিকরা কি আর আদৌ বিদেশে কাজে থাকতে পাড়বেন–রেমিটেন্স আসার বন্ধ প্রবাহ কি আগের মত হবে। না বেকার হয়ে দেশে বোঝা হয়ে এসে বেকার থাকতে হবে তাদের তা কেউ জানে না ।আগামির চ্যালেঞ্জ হবে মানুষের সুস্থ্য থাকার ভয়ঙ্কর সাইকোলজিক্যাল চ্যালেঞ্জ।নিকট আগামির চ্যালেঞ্জ ভাত খেয়ে বেচে থাকার মত মৌলিক চাহিদার চ্যালেঞ্জ । মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্র্য়োজন হবে কাজ ও কাজের বিনিময়ে অর্থ হাতে পাবার চ্যালেঞ্জ।করোনা কতদিন মানুষকে তাতিয়ে নিবে আর সে প্রেক্ষাপটে আগামির পেশা,ব্যবসার ভৌত কাঠামো কি রকম হবে তাও মানুষের চিন্তার বাইরে ।সবকিছুর ক্রীড়নক রহস্যে ঘেরা কোভিড-১৯ ।এই অবস্তায় আমাদের মেগা প্রকল্পের মেগা ব্যয় বাড়িয়ে কাজ শেষ হবার যৌক্তিকতার পাশাপাশি সরকারকে এখন ব্যয় করতে হবে। অর্থনীতিবিদ এবং বিআইডিএসের সিনিয়র গবেষনা ফেলো ডঃ নাজনীন আহমেদ মনে করেন “ এই মেগা প্রকল্প গুলির কাজ দ্রুত শেষ না করলে এসবের ব্যয় বেড়ে যাবে অনেক। আর এসব প্রকল্পে অনেক মানুষের রুটি-রুজি বা কর্মসংস্থান জড়িত । এই মুহূর্তে তো সরকারকে ব্যয় করতে হবে।সরকার ব্যয় না করলে মানুষের হাতে টাকা আসবে না। মানুষের হাতে টাকা না আসলে মানুষ খরচ করতে না পাড়লে অর্থনীতি স্থবীর হয়ে পড়বে।এতে করে আসলে মন্দা আরো দীর্ঘায়ীত হবার শংকা থেকে যায়।‘’
আবার এই প্রকল্প গুলির কাজ শুরুর দিকে না হলে কথা ছিল ।কাজ অনেকদুর সমাপ্ত হয়েছে।প্রকল্পে অনেক বিদেশী কারিগরী ও টেকনিশিয়ান লেভেলের মানুষ কাজ করত। তারা নীজ নীজ দেশে করোনাকালে ফিরে যাওয়াতে সঠিক সময় এবং মানসম্মত কাজের বাস্তবায়নেও তৈরি হয়েছে বড় ধরনের আশংকা।সমস্যার বহুমাত্রিকতা কত ব্যাপক ও জটিলতাময়।সমাপ্তি বা অসমাপ্তি উভয়েই সঙ্কট ।এ যেন জটিল ধাধার মত। এই মুহূর্তে ঝিমিয়ে যাওয়া প্রকল্পগুলি হচ্ছেঃ-১)ঢাকার মেট্রোরেল ২)ঢাকা গাজিপুর বাস র্যা পিড এলিভেটেট এক্সপ্রেস প্রক্ল্প।৩) কক্সবাজার রেল এক্সটেনশন প্রকল্প।৪)কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে ৩.২কিমি টানেল প্রকল্প।৫)কক্সবাজার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প ।৬)রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।৭) যাওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্প।
এগুলি সরকারের অগ্রাধিকারে থাকার পাশাপাশি এখন বেশি মনোযোগ দাবী করে মাঠ ফষলের উৎপাদনের চাকা ঠিক রাখা ।ঘূর্ণিঝড় আমফানে ২৬ টি জেলার ফল ফষল কিছুই আস্ত নেই।সেখানকার অপ্রতিষ্ঠানিক লক্ষ লক্ষ কৃষি শ্রমিকরা বেকার হয়ে বসে আছেন। স্বাস্থ্য বিধি নিষেধে এবং বাস ভাড়া বৃদ্ধির জন্য তারাও স্বচ্ছন্দে অন্য জেলাতে কাজ করতে যেতে পারছেন না। নিদারুন খাদ্যাভাবে কাটছে তাদের দিন। কাজেই এই মুহূর্তে সবচাইতে জরুরী অগ্রাধিকার ;মাঠ ফষল, প্রানী-মৎস্য অর্থাৎ টোটাল কৃষির গভীর ক্ষত দ্রুত সাড়িয়ে তোলা ।ঘুর্নিঝড় আমফান আবার আগের হিসেবটাও উল্টে দিয়ে মড়ার উপর খড়ার ঘা তৈরি করে দিয়েছে ।বাংলাদেশের জন্য এক জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ।এ যেন শ্যাম রাখব না কুল রাখি অথবা সবটাই রাখির মত সমস্যা ।করোনায় স্থবির অর্থনীতিতে এখন রাজস্ব আদায়ে বড় আকারের ধসে টাকার খোঁজে সরকার।লোন পাবার জন্য সরকার বিদেশী দাতা ও মিত্রদের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। একদিকে রাজস্ব আদায়ের হার কম, অন্যদিকে প্রণোদনার টাকার জোগান দেওয়া নিয়ে বেশ চাপে পড়েছে সরকার। চলমান আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে উন্নয়ন সহযোগীদের দ্বারস্থ হয়েছে সরকার। নিম্ন আয়ের মানুষ ও শ্রমজীবীদের সহায়তা করতে সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি বাজেটে সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়ামিললে সেটা দেশের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে।
এখন ভাবনার ব্যাপার হচ্ছে, এতসব জটিল বাধায় পড়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন,বাজেটের ঘাটতি সংগ্রহ সাপেক্ষে দেশের প্রবৃদ্ধির ফিগার এই অর্থ বছরে কি বার্তা দেয় সেটাই এখন আগ্রহের বিষয়।
লিখেছেনঃ রিপন আশরাফ
,রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ও গবেষক।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ পলাশ শিকদার