প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষকদের জন্য বিভাগীয় প্রার্থীতা বহাল রাখা প্রয়োজন।
সম্প্রতি ৩৮তম বিসিএস -এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে অনেক সহকারী শিক্ষকই ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে। তারা তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখেই বিসিএস-এর মত একটা তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। শুধু ক্যাডার সার্ভিসই নয়,নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণি ও ২য় শ্রেণির এমনকি ৩য় শ্রেণির উপরের গ্রেডের সকল চাকরিতে কোনো না কোনো সহকারী শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন। এতে কি বুঝা যায়? এতে বুঝা যায় এরকম হাজার হাজার মেধাবী সহকারী শিক্ষক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করছেন। শুধু বয়সের বেড়াজালের কারণে তারা সহকারী শিক্ষকের চাকরি করছেন। এসব মেধাবী শিক্ষকদের যদি একটু উৎসাহ দেয়া যায় তাহলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চেহারা পাল্টে যেতে বাধ্য। অনেক সহকারী শিক্ষক আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নামক হয়রানির কারণে বয়সের শেষ প্রান্তে এসে কোনো উপায় না পেয়ে সহকারী শিক্ষকের চাকরি করছেন অথচ প্রশাসনের যেকোন স্তরে চাকরি করার যোগ্যতা তাদের আছে। এসব সহকারী শিক্ষক যদি বিভাগীয় প্রার্থীর সুযোগ পায় তাহলে হাজার হাজার মেধাবী তরুণ-তরুণীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করতে উৎসাহিত হবে। তারা এটা ভেবে সহকারী শিক্ষককের চাকরিতে যোগদান করবে যে অন্তত বিভাগীয় সুবিধা নিয়ে একদিন অফিসার হতে পারবো। এসএসসি পাস করে চাকরি পাওয়াএকজন কন্সটেবল তাদের বিভাগীয় প্রার্থীতার সুবিধা নিয়ে এসআই হতে পারে। আবার খাদ্য অধিদপ্তরের পিয়ন বিভাগীয় প্রার্থীতার সুযোগ নিয়ে খাদ্য পরিদর্শক হতে পারে। এরকম উদাহরণ বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগেই আছে। তাহলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কেন বিভাগীয় প্রার্থীতার সুযোগ পাবে না। তারা কি অযোগ্য। আজ হাজার হাজার সহকারী শিক্ষক আছেন যারা স্নাতক(সম্মান) , স্নাতকোত্তর, বিএড এবংএমএড পাস। এবং চাকরিতে যোগদান করার পরও সরকারি সুবিধা নিয়ে অনেকে বিএড, এমএড করেছেন। কর্তৃপক্ষ যদি বিভাগীয় সুবিধা নাই দিবে তাহলে শিক্ষকদের কেন সরকারি সুযোগ নিয়ে বিএড,এমএড করতে দেওয়া হয়েছে? আজ হাজার হাজার সহকারী শিক্ষক হতাশ, আতঙ্কিত এবং বিষণ্ণগ্রস্ত। কারণ তাদের নাকি বিভাগীয় প্রার্থীর সুযোগ বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, মেধাবীহীন এবং নিরুৎসাহিত করার প্রস্তাব। এই প্রস্তাব পাস করা হলে অধিকাংশ সহকারী শিক্ষক হতাশায় নিমজ্জিত হবে। চুরমার করে ভেঙ্গে যাবে তাদের এত দিনের লালিত স্বপ্ন। এসব সহকারী শিক্ষক শুধু অফিসার হওয়ার আশাতেই তাদের মেধাকে উত্তর উত্তর বৃদ্ধি করছে যার কারণে সবাই অফিসার হতে না পারলেও প্রাথমিক শিক্ষাকে পাল্টে দিয়েছে। অধিকাংশ মেধাবী সহকারী শিক্ষক ৩য় শ্রেণির অন্যান্য চাকরিতে সুযোগ পেয়েও বিভাগীয় সুবিধা নিয়ে অফিসার হওয়ার আশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মত সম্মানজনক পেশাকে বেছে নিয়েছে। সেই সম্মান যেন আজ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বিভাগীয় সুবিধা বাতিল করে তাদেরকে চারটি পদোন্নতির কথা বলা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ কি ভেবে দেখেছে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি কতটা সোনার হরিণ। আজ ১১বছর হলো প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি নাই। আর কবে হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নাই। আর চারটা পদোন্নতি? একটা পদোন্নতি পেতে পেতেই অবসরের সময় হয়ে যায় তাহলে সহকারী শিক্ষকরা চারটি পদোন্নতি কীভাবে পাবে? এটা সহকারী সাথে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যদি আমূল পরিবর্তন করতে হয় তাহলে মেধাবীদেরকে এই পেশায় নিয়ে আসার সকল ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু বেতন গ্রেড পরিবর্তন করলেই মেধাবীরা এই পেশায় আসবে না কারণ অন্যান্য বিভাগেও বেতন পাওয়া যায়। বেতন গ্রেড হতে হবে সম্মানজনক আর দিতে হবে বিভাগীয় প্রার্থীতার সুযোগ যা ব্যবহার করে একজন সহকারী শিক্ষক অফিসার হওয়ার সুযোগ পাবে। তাহলেই কেবল মেধাবীরা শিক্ষকতার প্রতি আকৃষ্ট হবে। সামর্থ্যের মধ্যে সকল সুযোগ দিয়ে মেধাবীদের যদি প্রাথমিক শিক্ষায় আনা যায় তাহলে অচিরেই প্রাথমিক শিক্ষার খোলনলচে পাল্টে যাবে। মেধাবীহীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কোনোদিনই কর্তৃপক্ষ SDG -এর লক্ষ্য (মানসম্মত শিক্ষা) অর্জন করতে পারবে না। আপনি যতই প্রশিক্ষণ দেন যদি একজন মানুষের মেধা ও জ্ঞান চর্চার আগ্রহ না থাকে তাহলে কোনোদিন SDG-এর লক্ষ্য অর্জিত হবে না। জাতিকে কর্তৃপক্ষ যদি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে চান তাহলে নিয়োগ বিধি -১৯(খসড়া)বাতিল করে সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থীতার সুযোগ বহাল রেখে শিক্ষকতায় মেধাবীদের আসার সকল ব্যবস্থা করুন।
কলাম লেখকঃ
জসিম বেপারী
সহকারী শিক্ষক
১১৫নং আলহাজ্ব সৈয়দ আতাহার আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
কালকিনি, মাদারীপুর।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ পলাশ শিকদার