করোনা ভাইরাস জাতিকে নতুন এক চ্যালেঞ্জ নিতে শিখিয়েছে। “স্বনির্ভরতার” শিক্ষা দিয়েছে এই মহামারি রোগ (কোভিড-১৯ ভাইরাস)। দেশের মানুষকে ঠিক কতটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে তা কেবল ভোগক্তভোগীই ভালো জানেন। করুন এক দৃশ্যে পরিণত হয়েছে জনজীবন।
আমাদের অনেক কিছু উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)। করোনা ভাইরাস আমাদের সামনে প্রচুর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে, তবে আমাদের জীবনে দেখা গেছে যখন যেমন পরিস্থিতি এসেছে তা থেকে আমাদের সবসময়ই শিখতে হয়েছে। যেমন শিক্ষতে হয়েছিল ছিয়াত্তরের মন্ত্বরে। এই পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষা দিয়েছে ঠিক কী আচরণ আমরা করছি এবং কী আচরণ আমাদের করা উচিত। এই ভাইরাসেই পরিস্থিতি অনেক কিছু শিখিয়েছে। এটি স্পষ্টতোই করে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে আমাদের বেঁচে থাকার জন্যে কেবল নিজেদের উপরেই স্ব-নির্ভরশীল করতে হবে সবসময় এবং সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য। ভবিষ্যতে আমাদের কি কি বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে সে দিকটাও বুঝিয়েছে করোনা ভাইরাস।
অন্যের উপর নির্ভর না করে প্রতিদিনের কাজের জন্যে নিজের প্রতি নিজের আস্থা রাখার কৌশল শিখেছি। কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে আমাদের নিজের, পরিবারের সদস্যদের, পাড়া প্রতিবেশি এবং বন্ধুদের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। কখন, কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে সে সর্ম্পকে জ্ঞান লাভ করেছি।
আমরা বুঝতে পেরেছি বাস্তব জীবন কতো কঠিন। আমরা সত্যি অর্থনৈতিকভাবে মিতব্যয়ী হতে শিখেছি। কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে বিলাশবহুল জীবনযাপনের কোন মূল নেই। জীবনকে যাপনের জন্য খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না। সুষম খাদ্য এবং পানি বেচেঁ থাকার জন্য এইটুকুই গুরুত্বপূর্ন। আমরা বুঝতে পেরেছি, যে কাউকে সহায়তা করার মধ্যে অনেক আত্মতৃপ্তি আছে। আগের তুলনায় আমাদের জীবনাচরণ পরিবর্তন করতে শিখেছি। জীবনমান কতটা দূরভোগের হয় তা সবার মাঝে টনক পড়তে রীতিমত কপালে ভাজ ফেলেছে।
এটা আসলেই একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা, কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে আমরা আমাদের কাছের মানুষগুলোকে অনেক বেশি সময় দেওয়া প্রয়োজন যা আগে কখনো উপলব্ধি করতে পারিনি। আমাদের জীবনকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। শিখেছি কঠিন জীবনযাপনকে সহজভাবে সরলতার সাথে ভাবতে। অনুধাবন করতে পারছি নানা কাজের পরিস্থিতির মাধ্যমে।
এই সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে বাড়ানো যায় তা শিখেছি। লকডাউনের দীর্ঘসময় বাসায়/বাড়িতে অবস্থান করার সময় আমরা বুঝতে পেরেছি একজন শয্যাশায়ী (বিছানা গত) মানুষ কতটা মানসিক সমস্যায় পরেন এবং তাদের মানিসিক অবস্থা কোন পর্যায় থাকে। মানসিক স্বাস্থ্যেরও যে যত্ন নিতে হয় সেটা একেবারই ভুলতে শুরু করি। শারীরিকের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যে সেবা নেওয়ার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছি। তার জন্য যোগব্যায়াম, মেডিটেশনের মত শরীরচর্চা কাজগুলো করতে উদ্ভুদ্ধ হয়েছি। সময়ের মূল্য চরমভাবে উপলব্ধি করতে এবং বুঝতে পেরেছি।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার যে অভ্যাস গড়ে ওঠেছে তা বলা বাহুল্য। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে স্বাস্থ্যবিধি (যেমন: মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাবস, সামাজিক দূরত্ব, পুষ্টিকর খাবারের সচেতনতা, শারীরিক ব্যয়াম, মানসিক যত্ন মেনে চলাফেরার মনোভাব সৃষ্টি করে তোলতে শিখেছি।
ভয়াল কোভিড-১৯ বিশ্বে সর্বক্ষেত্রে নিজের ছাপ রাখছে। শিক্ষা ব্যবস্থাও এর ছাড় পাইনি। কোভিড-১৯ কী ভাবে বাসায় শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে বাধ্য করছে। দেশের পর দেশ যখন করোনার মোকাবিলায় তখন লকডাউনকেই একমাত্র পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছে দেশের মানুষ। তখন ইন্টারনেট ভিত্তিক শিক্ষা ও কাজকর্মই একমাত্র উপায়। পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়েছে ছাত্র/ছাত্রীদের অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং এরই মধ্যে কাজ করছে বিভিন্ন অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সকল কর্মকর্তা। স্বল্প পরিসরে অল্প সময়ে অফিসের কিনবা বাসার প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারার অভিজ্ঞা অর্জন করেছে। তথ্য ও যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। জীবনের এই দোদুল্যমান সময়কে মোকাবেলা করতে হচ্ছে একমাত্র তথ্য প্রযুক্তির উপর। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়।
বাংলাদেশে এই মহামারীতে বিভিন্ন নামে নতুন করে স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন গড়ে ওঠেছে। যারা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করতে এবং যার যার ধর্মীয়ভাবে লাশ দাফনের কাজ করছে। অনেকে এই কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে অন্যের জন্য। অনেকে করোনা পজিটিভ হয়েছে তার পরেও তাঁরা তাদের সুস্থতার শেষে আবার স্বেচ্ছাসেবক কাজে ফিরে এসেছেন। মানবিকতার সেবার স্বাক্ষর রেখেছেন এই সব সংগঠন। কাধেঁ কাধঁ মলিয়ে অর্থাৎ সঙ্গে একত্রতায় চলতে হবে, তাহলে পরে আমরা যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবো।
উপরোক্ত শিক্ষনীয় বিষয় আমাদের মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পের জন্য যেমন শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত তেমনি সাধারণ সকল মানুষের জন্য শিক্ষনীয় ভূমিকা পালন করবে।