
চীফ রিপোর্টার, আশরাফুল সিকদারঃ
মির্জাপুরে উত্ত্যক্তকারীর নানা ধরনের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মুসফিকা আক্তার (১৩) নামের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। শাহিন আলম ওরফে ফাহিম (২২) নামের এক বখাটে তাকে প্রায় দিনই পথেঘাটে উত্ত্যক্ত করত। ফাহিম কুড়াতলী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। এদিকে ঐ বখাটেকে বাঁচাতে একটি প্রভাবশালী মহল মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই ঐ ছাত্রীর লাশ তড়িঘড়ি দাফন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আজাগানা ইউনিয়নের ঘাগড়াই কুড়াতলী গ্রামে।
মুসফিকার মৃত্যুতে তার সহপাঠীসহ এলাকার মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে ফাহিম পলাতক। মুসফিকার বাবার নাম মোতালেব মিয়া। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থাকেন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে মুসফিকা বড়। বাবা বিদেশে থাকায় স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে মুসফিকাকে প্রেমের প্রস্তাবসহ নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভিতি দেখাত ফাহিম (২২)। জোরপূর্বক মোবাইল নম্বর নিয়ে ফোনে বিরক্ত করত। লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি প্রথমে তার পরিবারকে জানাতে পারেনি। তবে মুসফিকার সহপাঠীদের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
গত সাত-আট দিন ধরে বখাটে শাহিন ও তার সহযোগীরা মুসফিকাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। ঘটনাটি জানতে পেরে মুসফিকার মা তাকে বকাঝকা করেন। লোকলজ্জার ভয়ে গত বুধবার রাতে মুসফিকা ঘরের ভেতরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
মির্জাপুর থানার পুলিশ জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইলে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মূল ঘটনা ধামাচাপা দিতে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও আজগানা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল কাদের সিকদারসহ একটি প্রভাবশালী মহল থানার পুলিশকে ম্যানেজ করে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি দাফন করে।
ফাহিমের পরিবার বিষয়টি অস্বীকার করে বলছে, এলাকার কিছু লোক ফাহিমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। এ ব্যাপারে আব্দুল কাদের সিকদার বলেন, ‘মুসফিকার আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে এলাকার কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে অপপ্রচার করছে।’
মির্জাপুর থানার উপপুলিশ পরিদর্শক মো. সুরুজ্জামান বলেন, ছাত্রীর চাচা মো. মোস্তফা মিয়া বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর অভিযোগ দিয়েছেন। লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এলাকার মাতাব্বরগণ লাশ বিনা ময়নাতদন্তে দাফন করার জন্য অনুরোধ করলে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। তবে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।