বাল্য বিবাহ কি সেটা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। আর এই বাল্য বিবাহের কারনে একটা ফুটন্ত গোলাপ (মেয়ে) কীভাবে তার নিজ জীবনের কাছে পরাজিত হয় তার একটি বাস্তব উদাহরণ দিচ্ছি:
মেয়েটির নাম প্রিয়দর্শিনী (ছদ্মনাম)। মেয়েটির চেহারা, আচার-আচরণ, ব্যবহার ছিল তার নামের মতই সুন্দর। ভদ্রতা, নম্রতা কোনো কিছুই কমতি ছিল না তার মধ্যে। ফুলের সুবাসের মতো নিজেকে ছড়িয়ে দিতো সবার মাঝে। সবার মুখে মুখে যার প্রশংসা ছিল প্রতিনিয়ত। প্রাণবন্ত, হাসিখুশি মেয়েটি যখন বারো বছরে পদার্পণ করলো, তখন থেকেই মেয়েটি অনেকের অসামাজিক নজরে পড়ে গেলো। মেয়েটির বাবা মা চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। তাই মেয়েটির বাবা মেয়েকে বিয়ে দিবে বলে আধাজল খেয়ে লাগলো। কিছুদিন পরেই মেয়েটির বিয়ে দেওয়া হলো বিলেত ফেরত ৩৫ বছরের সুঠাম দেহের অধিকারী একজন পুরুষের সাথে। অথচ মেয়েটি বিয়ে কি সে কথাটাই বুঝতো না। শারীরিক, মানসিক সব দিক থেকেই মেয়েটি ছিল অপ্রস্তুত। তারপরেও শুরু হলো তার নতুন জীবন। আমরা যেটাকে বলি দাম্পত্য জীবন।
চরাই-উৎরাই করে বেড়ে উঠা বারো বছরের একটি মেয়ের দাম্পত্য জীবন কতটা দুর্বিষহ হতে পারে সেটা কেবল মেয়েটার অসহায় চেহারা আর অশ্রুসিক্ত চাহুনি দেখেই বুঝে ফেলেছিলাম।শুরু হলো একটি ফুটন্ত গোলাপ ঝরে পড়ার চরম কাহিনী। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই মা হতে যাওয়া মেয়েটি মাতৃত্ব কি জিনিস সেটা বুঝতেও অক্ষম। পরিবার সামলানো, স্বামীকে খুশি করা, নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া কোনো কিছুই তার নিয়ন্ত্রনে ছিলো না।অসহ্য যন্ত্রণায় সব সময় নিজেকে অত্যাচারিত পাখির মতো গুটিয়ে রাখতো। আর বাক স্বাধীনতা সেটা তো কখনোই পায় নি। যাইহোক, মেয়েটি হাসপাতালে তার বাচ্চা প্রসব করলো। প্রচুর রক্তক্ষরণে শারীরিক দুর্বলতা যেনো তার নিত্য দিনের সঙ্গী হয়ে গেলো। এক পর্যায়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারানোর মতো অবস্থা। যেনো মৃত্যুরমুখ থেকে বারে বারে বেঁচে যাচ্ছে মেয়েটি। আহ্ কি করুণ পরিণতি! একদিকে নিজে, নিজের সন্তান, পরিবার সবকিছু মিলিয়ে লোমহর্ষক অবস্থা। সত্যিই এমন বিষাদময় অবস্থায় কি কোনো মানুষ টিকে থাকতে পারে?তাই মেয়েটিও অবশেষে নিজের কাছে হেরে গেলো, ঢলে পড়লো অকাল মৃত্যুর কোলে। আর বিদায় জানিয়ে দিলো নিষ্ঠুর পৃথিবী এবং তার মানুষগুলোকে।
মূলকথাঃ আমাদের সমাজে এমন আরো অনেক প্রিয়দর্শিনী আছে যারা বাল্য বিববাহের বেড়াজালে পড়ে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে তা হয়তো আমাদের কারো অজানা নয়। তাই চলুন মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই যাতে আমার আপনার কারনে কোনো বাবা মা তার মেয়েকে বাল্য বিবাহ দিতে বাধ্য না হয়। আর আমরা আমাদের পরিবারের বোনদের বাল্য বিবাহ না দেই, নিজেরা বাল্য বিবাহ না করি। তাহলে হয়তো মানুষের জীবনে এতো কষ্ট থাকবে না। আর মনে রাখবেন মানুষের জীবনটা স্বল্প সময়ের জন্য হলেও, জীবনটা অনেক সুন্দর এবং রঙিন। নিজেকে নিজের মতো বাঁচতে দিন অন্যকেও তার নিজের মতো বাঁচতে দিন।
লেখকঃ কাজী শফিকুল ইসলাম।