আক্তারুজ্জামান আশিকঃ সবাইকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ এর শুভেচ্ছা। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে বাংলা নববর্ষ পালনের ইতিহাস অনেক পুরনো একটি ঐতিয্যগত ধারা এবং প্রথাগত ভাবে বাংলা বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উৎযাপিত হয়।
বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাঙালিরা এই দিনটি বিশেষ উৎসবের সাথে পালন করে থাক। তাই, পহেলা বৈশাখ বিশেষ করে বাঙালিদের একটি সর্বজনীন
উৎসব হিসেবে খ্যাত।
বাংলা নববর্ষের ইতিহাসঃ অনেক প্রাচীনকাল থেকেই প্রথমে সৌর পঞ্জি অনুসারে বাংলা নববর্ষ পালিত হতো এবং ৭ম শতকের রাজা শশাঙ্ক বাংলা পঞ্জিকার উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীকালে সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন এবং এর জন্য তিনি বেশি আলোচিতও ছিলেন, মুলতঃ সম্রাট আকবর কৃষকদের নিকট থেকে খাজনা ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে বাংলা মাস ও সনের ব্যবহার করতেন।
তৎকালীন সময়ে সম্রাট আকবর এর আদেশে জ্যোতি বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ইংরেজি ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় ৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬ ইংরেজি সন থেকে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয়।
প্রথমে আকবরের প্রবর্তিত পঞ্জিকার নাম ছিল “তারিখ-এ-এলাহী” এবং মাস গুলোর নাম ছিল যথাক্রমে কারবাদিন, আর্দি, বিসুয়া, কোর্দাদ, তীর, আমার্দাদ, শাহরিয়ার, আবান, আজুর, বাহাম ও ইস্কান্দার মিজ। পরবর্তী সময়ে মাসের এই নাম গুলো পুনঃ নামকরন করা হয়। কারো পক্ষে আসলে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হয় নাই যে, কখন এবং কীভাবে এসব নাম পরিবর্তিত হয়। তবে ধারণা করা হয় যে, বিভিন্ন নক্ষত্রের নামের উপর ভিত্তি করে বাংলা বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে, যেমন- বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জায়ীস্থা থেকে জ্যৈষ্ঠ, শার থেকে আষাঢ়, শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ, ভদ্রপদ থেকে ভাদ্র, আশ্বায়িনী থেকে আশ্বিন, কার্তিকা থেকে কার্তিক, আগ্রায়হন থেকে অগ্রহায়ণ, পউস্যা থেকে পৌষ, ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র।
বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যগত নাম নাম ছিল “বঙ্গাব্দ“ এবং গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। তবে আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে।
সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকে পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও পরবর্তিতে বিভিন্ন রীতি-নীতি বাংলা নববর্ষবরণে সংযুক্ত হয়েছে । বর্তমান সময় জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাই জাকযমক পূর্ণভাবে বাংলা নববর্ষ উৎযাপন করে থাকে।