মীমরাজ হোসাইন রাহুল, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ আওয়ামী লীগের আসল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, আপনাদের মাথার ওপর শেখ হাসিনার হাত আছে। আমরা নেতা একজনই মানি, শেখ হাসিনা। বাকিদের গোনায় ধরি না। সদর উপজেলার ফতুল্লার নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কে শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে জরুরি কর্মিসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পাঁচ বছর আমি কারো বিরুদ্ধে কথা বলিনি। আঘাত করলেও কথা বলি না। ভেবেছিলাম, দেখি আমি আমার নেত্রীর মতো নীলকণ্ঠী হতে পারি কি না। বাবা আমাদের পরিবারকে নেত্রীর কাছে তুলে দিয়ে গেছেন, আমরা তাকে মানি।
শামীম ওসমান বলেন, একটা কঠিন ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক ও লোকাল পলিটিকস। এটা মোকাবিলা করতে হবে। যারা খেলতে চান, আপনারা জেনে রাখেন আমরা ট্রেনিং নিচ্ছি। আমরা এবার খেলার জবাবটা কিন্তু সেইভাবে দেব। কারণ আমরা সবভাবে খেলতে জানি। আমাদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কিছু পাই আর না পাই লড়াইটা করতে হবে।
যারা খেলতে চাইবে নারায়ণগঞ্জে, তাদের ঘরে ঢুকে ঢুকে আঘাত করা হবে। ঘরে ঢুকে আঘাত করব, যদি নেত্রীর দিকে কেউ নজর দেয়।
নেতাকর্মীদের প্রত্যেকটি এলাকায় সভা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের প্রতিটি এলাকায় মিটিং করার ব্যবস্হা করেন, কর্মী তালিকা করেন। যাতে রাত ১টার সময় ডাক দিলেও তারা রাস্তায় নামতে পারে। স্হানীয় আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে এক সারিতে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসেন সবকিছু ভুলে, সবকিছু মন থেকে ঝেড়ে একসঙ্গে কাজ করি। আমাদের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। কারণ সামনে আঘাত আসছে।
তিনি বলেন, জেলায় গত ১৫ দিন অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। অনেকে অনেক কথা বলেছে। আমার ভেতরে যে রক্তক্ষরণ হয়েছে, তাও আমি জানি। আমি শামীম ওসমান রাস্তায় দাঁড়ালে দুই-চার লাখ লোক এমনিতেই জমে যায়। আর কয়েকটা দিন, আর কয়েকটা মাস আপনাদের কষ্ট হবে। কারণ আঘাত আসবে এটা নিশ্চিত। সিটি নির্বাচনের নানা বিষয় ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেন, একটা পক্ষ মাঠে নেমেছিল, কারা এরা? আমার ফেসবুক নেই। আমি শুনি, আমাকে দিয়ে নাকি সরকার তৈমূর আলম খন্দকার ভাইকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। কেন, কিছু জিনিস প্রমাণ করার জন্য। আমি বলতে চাই—আমার দল, আমার নেত্রী, আমার দলের কোনো কেন্দ্রীয় নেতা কেউ আমাকে এই নির্দেশনা দেয়নি। কিন্তু আমি দেখলাম কোনো কোনো জায়গায় জানি কী কী লেখা হয়েছে। এ কথাগুলো এ কারণে বললাম, রাজনীতিতে কিছু নোংরামি আছে। আপনারা লক্ষ করে দেখবেন, নারায়ণগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, অতীতে নারায়ণগঞ্জে আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক কিছু হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের স্হানীয় অঙ্গসংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করা প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, অনেকে পদ নিতে পারে কিন্তু ত্যাগ নিতে পারে না। যারা আঘাত পেয়েছেন, তারা আমার মতো হওয়ার চেষ্টা করেন। যারা কষ্ট পেয়েছেন আমরা তাদের করতালি দিয়ে সম্মান জানাচ্ছি। কর্মী থাকেন, সম্মান অনেক বেশি। পদ-পদবি ছাড়া থাকেন, ভালো থাকবেন।
কর্মিসভায় ত্বকী হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে কয়েক জন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। তারা বলে আবার তারাই শোনে। আজ আমি সরকারকে বলতে চাই, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, দেশের আইন বিভাগকে বলতে চাই—অবিলম্বে ত্বকী হত্যার বিচার করা হোক। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে বিচার করা হোক। আমি এই শিশু হত্যার বিচার চাই।’
এ সময় উপস্হিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, মহানগরের সহসভাপতি চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদল, সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিনসহ স্হানীয় নেতাকর্মীরা।