আশিকুজ্জামান মিজান, ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী ফারজানা। কে বা কারা মেয়েটির ফেসবুক একাউন্ট থেকে ব্যাক্তিগত ছবি নিয়ে কুদ্দুস মিয়া নামের ফেইক একাউন্ট খুলে মেয়েটিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্লেকমেইল করে যাচ্ছিলো।
তাছাড়া মেয়েটির ব্যাক্তিগত ঐ ছবিগুলো দিয়ে অশ্লীলভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে যাচ্ছিলো প্রতিনিয়ত। মেয়েটির নিকট আত্মীয়দের বিভিন্ন অশ্লীল বার্তা পাঠাতো কুদ্দুস মিয়া নামের ফেইক একাউন্টটি। যার প্রফাইলে এবং টাইমলাইনে উক্ত মেয়েটির ছবি আপলোড থাকায় তার নিকটআত্মীদের কাছেও মেয়েটি সামাজিকভাবে হয়রানি এর শিকার হতো।
ঘটনাটির পর গত ১৩ মার্চ ২০২২ মেয়েটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুদের সহায়তায় জানতে পারে বাংলাদেশ সাইবার অপরাধ তদন্ত ইউনিট ” সাইবার সেফটি ফার্স্ট ” টিমের কথা। মেয়েটি উক্ত ইউনিটের কাছে বিস্তারিত অভিযোগ জানানোর পর টিমের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেটর কে.বি খান বিজয় মেয়েটিকে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেন।
মেয়েটি একাই মৌলভীবাজার মডেল থানার অফিস ইনচার্জ বরাবর প্রমাণসহ অভিযোগ দায়ের করার পর পরই সবকিছু আমলে নিয়ে উক্ত টিমের পক্ষ থেকে মেয়েটিকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয় এবং তদন্তের ৪ দিনের ভেতরে ১৬ মার্চ ২০২২ অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে খুজে বের করে টিম সি.এস.এফ ( সাইবার সেফটি ফার্স্ট ) ।
তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায় ছেলেটি মেয়েটিকে কোনো এক বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখে প্রেমের প্রস্তাব দেয় এবং মেয়েটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অভিযুক্ত ব্যাক্তি এই ফেইক একাউন্ট খুলে মেয়েটিকে হয়রানি করার পথ বেচে নেয়।
সর্বশেষ ছেলেটি মেয়েটির কাছে ক্ষমা চায় আর ভবিষ্যতে মেয়েটির কোনো ক্ষতি করবেনা বলে মুচলেকা এর মাধ্যমে ছেলেটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷
ভিক্টিম ফারজানা আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, সি. এস. এফ টিম আমাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আইন থেকে নিয়ে সবদিক দিয়ে আমায় সাহস দিয়ে সহযোগিতা করেছেন কিভাবে কি করে তদন্তে সহায়তা করতে হবে সবকিছু উনারাই আমাকে বলেছেন এবং ভয় পাইনাই আমি নিজেই কলেজ শেষে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করি। তারপর টিমের ভাইয়ারা সবকিছু বের করেন। আমি এখন নিরাপদ কারণ আইনকে জানিয়েছি ভবিষ্যতে আশা করি আমার আর কোনো সমস্যা হবেনা।
এ ব্যাপারে সাইবার সেফটি ফার্স্ট টিম আমাদের জানান, একজন ভিক্টিম হিসাবে মেয়েটি আমাদের তদন্তে সর্বাধিক সহযোগিতা করেছে তাই আমরা মেয়েটিকে সাহায্য করতে পেরেছি।
অনেকেই এইসব হয়রানির শিকার হলে মানসিকভাবে ভেংগে পড়েন এবং আইনের আশ্রয় নিতে চান না।
আপনার ব্যাক্তিগত ছবি বা তথ্য নিয়ে কেউ ফেইক একাউন্ট খুলে আপনাকে হয়রানি করে হউক সেটা ফেইক একাউন্ট বা অন্যকিছু সেক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি বলে ?
ষষ্ট অধ্যায় – অপরাধ ও দন্ড
অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, ইত্যাদির দণ্ড
২৬। (১) যদি কোনো ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘‘পরিচিতি তথ্য’’ অর্থ কোনো বাহ্যিক, জৈবিক বা শারীরিক তথ্য বা অন্য কোনো তথ্য যাহা এককভাবে বা যৌথভাবে একজন ব্যক্তি বা সিস্টেমকে শনাক্ত করে, যাহার নাম, ছবি, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, মাতার নাম, পিতার নাম, স্বাক্ষর, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নম্বর, ফিংগার প্রিন্ট, পাসপোর্ট নম্বর, ব্যাংক হিসাব নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ই-টিআইএন নম্বর, ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল স্বাক্ষর, ব্যবহারকারীর নাম, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড নম্বর, ভয়েজ প্রিন্ট, রেটিনা ইমেজ, আইরেস ইমেজ, ডিএনএ প্রোফাইল, নিরাপত্তামূলক প্রশ্ন বা অন্য কোনো পরিচিতি যাহা প্রযুক্তির উৎকর্ষতার জন্য সহজলভ্য।
তো বুঝতেই পারছেন রেহাই নাই।। তো একজন ভিকটিম হিসাবে আপনার কি করা?
১) অবশ্যই নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত রাখবেন।
২) সিনিয়র কারো সাথে শেয়ার করবেন মনে রাখবেন আপনি যদি ভয়ে আপনার সমস্যা লুকিয়ে রাখেন পরবর্তীতে তা অনেক বড় হবে যা আপনাকে ভাবাবে কেনো আগে জানালামনা।।
৩) নিকটস্থ থানায় দ্রুত জিডি করবেন অথবা সিরিয়াস ইস্যু হলে সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা করবেন।।
৪) মেয়ে ভিক্টিম হয়ে থাকলে আমাদের হ্যাল্প লাইন নাম্বারে অথবা মহিলাদের জন্য সরকারি দ্রুত সাইবার সাপোর্ট টিম Police Cyber Support for Women – PCSW তাদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করবেন।
৫) সব প্রমাণ স্ক্রিনশট অথবা স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখবেন কেউ কল করে হুমকি দিয়ে থাকলে কল রেকর্ড করে রাখবেন।
৬) ভয় পাওয়ার কিছু নেই মনে সাহস রেখেই অভিগ্যদের সাথে শেয়ার করবেন।