সকালবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম: গতকাল ২৮ এপ্রিল রোজঃ বৃহস্পতি বার বসন্ত বিলাস রেস্টুরেন্ট-এ পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি রূপগঞ্জ আহবায়ক কমিটির উদ্যোগে পরিবেশ ভাবনা ও শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোসাইটির পরিচালক, হাফেজ পারভেজ হাসান, মোঃ ইয়ামিন ভূইয়া, মহাসচিব মিজানুর রহামন।
সোসাইটির রূপগঞ্জ আহবায়ক কমিটির আহবায়ক মোঃ জহুরুল ইসলাম জুম্মান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। প্রধান অতিথি মোহাম্মদ হোসাইন তার বক্তব্যে বলেন “সবাই মিলে গড়বো দেশ, দূষণ মুক্ত বাংলাদেশ” এই স্লোগানকে সামনে রেখে তিনি বলেন বাংলাদেশ মিঠা পানির মাছ উৎপাদনের দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে সেটা কমতে থাকবে, যা এরই মধ্যে অতি মাত্রায় কমতে শুরু করেছে। কারণ সমুদ্রের নোনা পানি ভেতরে প্রবেশ করতে থাকবে। আর আমাদের ফসল উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব পড়বে।
বর্তমানে আমাদের অমূল্যবান সম্পদ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার পথে। এসব প্রাকৃতিক বিপর্যায়ে মানব স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাপমাত্রা বেড়ে যাবে, যার প্রভাব ক্ষতিকর। সর্বোপরি বলা যায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত আসবে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে, আর দেশের সার্বোভৌমত্ব ও মানবাধিকার রক্ষায় সরকার ,ব্যবসায়ী, জনসাধারণ সবাইকে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া আমাদের সামনে আর কোন প্রশস্ত পথ নেই।
দেশের মানুষের ওপর নির্ভর করে পরিবেশের সুরক্ষা। আমাদের প্রত্যেকের প্রাণী হিসেবে শ্বাস প্রশ্বাসের প্রয়াজন হচ্ছে। আমরা অভুক্ত থাকলেও আমাদের প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হচ্ছে নিঃশ্বাসের। তাই এখন আর অসম্ভব কথাটি চাইলেও বলা সম্ভব নয়। নিজেদের অস্তিত্বের মতোই পরিবেশের অস্তিত্বের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। গুরুত্বের পাশাপাশি আমাদের বাড়িয়ে তুলতে হবে আরো বেশী সচেতনতা শাসকগোষ্ঠী বরাবরই এ ব্যাপারে উদাসীন। তাই শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে বসে না থেকে আমাদেরকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে।
বিশেষ অতিথি হাফেজ পারভেজ হাসান বলেন বাংলাদেশের যে উন্নয়নের জোয়ার চলছে তা অত্যন্ত পরিবেশবিধ্বংসী। প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বন ধ্বংসকারী , পানির অব্যবস্থাপনা , অপরিকল্পিত নগরায়ন সর্বাপেক্ষা এক পরিবেশ বিধ্বংসী সময়ের ভেতর দিয়ে আমরা সামনের পথ চলা অব্যহত রেখেছি। এখনই সময় রুখে দাড়ানোর বিবিধ স্বেচ্ছাচারি পরিবেশ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে নানারকম দূষণ রোধে পর্যাপ্ত আইন থাকলেও ব্যবহারের অক্ষমতায় সেগুলোতে আজ মরিচা পড়ে গেছে। বাংলাদেশের জলাভূমি, বনভূমি ও পাহাড় রক্ষায় পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। নদী রক্ষায় তেমন কোন আইন না থাকলেও যেসব প্রতিষ্ঠানকে নদী রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা যদি আত্মপ্রত্যয়ী হয় তাহলে দেশের নদী গুলো রক্ষা করা সম্ভব।
কিন্তু সরকার এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যয় ও দায়িত্ব পালনের অভাব প্রকট। নদী ভরাটের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণ আগের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন হচ্ছে। পরিমানে কম হলেও অনেকেই এখন নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন নদী রক্ষায়। আমাদের এ সংখ্যা যত বেশী বাড়বে ততই আমদের পরিবেশ রক্ষার সম্ভাবনা আরো বেশী উজ্জ্বল হবে।
বর্তমানে সরকার অনেক ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে চাপের মুখে কাজ শুরু করেছে। তবে আন্তরিকভাবে যদি আইনি প্রয়োগ করা হয় তবেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। অনুষ্ঠানের সভাপতি মোঃ জহুরুল ইসলাম জুম্মান বলেন একটা বিষয় লক্ষনীয়, বনভুমি উজাড়, পাহাড় কাটা, কৃষিজমিতে লবনাক্ততা, নদী দূষণ যাই বলি না কেন ধনী শিল্পপতিরাই এসবের জন্য দায়ী। পরিবেশ দূষণ করছে তারা জেনে বুঝে, সচেতনভাবে। উপরন্তু পরিবেশ রক্ষায় সরকারের সামগ্রিক নীতিনির্ধারণ ও সমন্বয় সাধনে রয়েছে পশ্চাৎপদতা । আর এ দু পক্ষের প্রত্যক্ষ মদদেই সবধরনের উন্নয়ন , উপার্জনের কেন্দ্রবিন্দু করা হচ্ছে ঢাকা নগরীকে। কাঙ্খিত পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিকভাবে আমাদের সম্পর্ক যেন পারস্পারিকের মধ্যে বজায় থাকে, তেমনি পরিবেশের মূল্যবোধও তেমন। পরিবেশ যেমনি আমাদেরকে প্রতিনিয়ত দিচ্ছে তেমনি পরিবেশকেও আমাদের দেওয়ার আছে। আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করতে হবে এখনই, কারণ বর্তমান প্রজন্মের সময় শেষ হতে চলেছে। অতঃপর সভাপতি দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত ঘোষনা করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন নুরুজ্জামান পাপ্পু, আরো উপস্থিত ছিলেন সোহাগ ইব্রাহীম, হামিদা খন্দকার সুপ্তি, মোঃ মামুন, মোঃ জিদান মীর, মোঃ শাকিল, মোঃ তৈয়ব, মোঃ সুমন, মোঃ মাছুম, মোঃ ইমরান, মোঃ জয়নাল, মোঃ সেলিম, মোঃ সোহান, মোঃ সুমন, মোঃ ফারুক, মোঃ দিলু (মাইটিভি) সহ অন্যান্য সদস্য বৃন্দ।