সাকিব আহমেদ | মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে সেলিমপুর গ্রামে বেসরকারী সংস্থা বারসিক’র সহায়তা দুর্যোগ প্রস্তুুতি সম্পর্কিত একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে । স্থানীয় এলাকায় দুর্যোগের পুর্বে, দুর্যোগের সময় এবং দুর্যোগের পরের প্রস্তুিত নিয়ে দুমাস ধরে গবেষণা কর্ম চলে। গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন বারসিক’র মাঠ গবেষণাকর্মী মুক্তার হোসেন।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন একটি দুর্যোগ প্রবন ইউনিয়ন হিসেবে চিহ্নিত। প্রতি বছর বন্যা, নদী ভাঙ্গন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড় সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে চরাঞ্চলের মানুষের রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গাছপালা, আবাদি জমি, জমির ফসল সহ প্রাণ-বৈচিত্র্য ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর এ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে চরাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। হরিরামপুর চরাবাসীর প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে জানমাল ও সম্পদের ক্ষতিগ্রস্থ কমিয়ে নিয়ে আসতে স্থানীয় মানুষ নিজেরা দুর্যোগের পুর্বে, দুর্যোগের সময় এবং দুর্যোগের পরে সম্পদের ক্ষতি কমিয়ে আনতে কিছু পুর্ব প্রস্ততি গ্রহন করে থাকেন।
দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থানীয় মানুষের চিরায়িত জ্ঞান, অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যে পুর্ব প্রস্তুতিগুলো নিয়ে থাকেন সেগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়। গ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষ মৎস্যজীবি, কৃষক, ছাত্র, বয়স্ক ব্যক্তি, নারী, ইউপি সদস্য, সমাজসেবক বিভিন্ন পেশার মানুষের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া এলাকা পর্যায়ে ব্যক্তিগতভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
সেলিমপুর গ্রামে প্রবীন ব্যক্তি হয়রত আলী বলেন, হরিরামপুর চরাঞ্চলে প্রতি বছরই কম বেশি বন্যার পানিতে এলাকা প্লাবিত হয়। নদীভাঙ্গনের ফলে অনেক জমি জমা ক্ষেতের ফসল, গাছপালা নষ্ট হয়। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের পুর্ব থেকেই কিছু প্রস্ততি নিয়ে থাকতে হয়। আগে থেকেই আমাদের প্রন্তুুতি জানা থাকলে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
সেলিমপুর পদ্মা নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি পলি আক্তার বলেন, সকল দুর্যোগ শিশু ও নারী ও বয়স্ক মানুষ বেশি বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। তাদের প্রতি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বেশি খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে সেলিম পুর গ্রামে নিকটবর্তী গ্রামে কোন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র না থাকায় নারীরা বন্যার সময় বেশি ঝুঁকিতে থাকতে হয়।
জয়পুর গ্রামের সমাজ সেবক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি ৩-৪ বার নদী ভাঙ্গনে শিকার হয়েছি। ২০২০ সালে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে সেলিমপুর গ্রামের ৯০টি পরিবার নদীভাঙ্গনে কবলিত হয়। নতুন করে আবার আমরা বসতি স্থাপন করেছি । গাছপালা লাগানো, বসতবাড়ি উচু করা সহ বিভিন্ন প্রস্তুতিমুলক কাজ কর্ম করতে হয়।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জামাল বেপারি বলেন, প্রতি বছরই চরাঞ্চলে বন্যা, নদী ভাঙ্গন, খরার কারনে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হই। তাই আমাদের পুর্ব সবারই থাকার দরকার আছে। ইউনিয়ন পরিষদ দুর্যোগ মোকাবেলায় আগে থেকেই আমরা জরুরী কমিটি গঠন করে রাখি। যাতে কমিটির সদস্যরা মানুষকে সহায়তা করতে পারে।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাফফার আলী বলেন, যেকোন দুর্যোগের পূর্বে কৃষকদের পূর্ব প্রস্তুতি বিষয়ে জানানো হয়। এ বছরও আকস্মিক পানি বৃদ্ধির সময় ও অতিবৃষ্টির আগাম সতর্কতা হিসেবে ৮০% ভাগ ধান পেকে গেলে ধান কাটতে বলা হয়েছে। দুর্যোগের পরে কৃষকদের নানা মুখি পদক্ষেপ নিতে বলা হয় এবং নানা ধরণের সহায়তা করা দেয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সের আর এমও ডা. শামীম বলেন, হরিরামপুর উপজেলায় বণ্যা হলে এলাকার মানুষ পানিত বাহিত রোগ ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বর পাচড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বন্যার সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরী স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য বেড রাখা হয়। অনেক সময় দায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলেও রাখা হয় বলে জানান তিনি।
প্রশঙ্গত, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন একটি দুর্যোগ প্রবন ইউনিয়ন হিসেবে চিহ্নিত । প্রতি বছর বন্যা, নদীভাঙ্গন, অতিবৃষ্টি, খরা, ঝড় সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে চরাঞ্চলের মানুষের রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গাছপালা, আবাদিজমি, জমির ফসলসহ প্রাণ বৈচিত্রে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বারসিক চরাঞ্চলের মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এবং পুর্ব প্রন্তুতিমুলক বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে। গ্রাম পর্যায়ে সচেতনমুলক আলোচনা সভা, বৃক্ষ রোপন কর্মসুচী, দুর্যোগ দিবস পালন, ইউনিয়ন দুর্যোগ কমিটিকে সক্রিয়করন, প্রশিক্ষন প্রদান, বিলবোর্ড প্রদানের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা, কৃষক নেতৃত্বে ধান ও মসলা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা সহ বিভিন্ন পুর্ব প্রস্ততিমুলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।