সকালবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম: দেশে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় দিবস হিসেবে সারাদেশে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২২’। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপদগামী সদস্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সময় তার ছোট ছেলে শেখ রাসেলকেও হত্যা করে। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলে (বর্তমানে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ) চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন শেখ রাসেল। তার জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর। শেখ রাসেলের জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৮ অক্টোবর ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে পালন এবং দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত ঘোষণা করে সরকার।
দিবসটি উপলক্ষে সোনারগাঁ উপজেলা শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল হক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শেখ রাসেল। দুই কন্যা, তিন পুত্র। কন্যা দুজন বেঁচে আছেন। একজন শেখ হাসিনা, অন্যজন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং কনিষ্ঠতম শেখ রাসেলকে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা-মায়ের সঙ্গেই। একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে, যিনি আবার সেই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা-স্থপতি, সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করার নজির পৃথিবীতে বিরল। সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রনেতা কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে প্রতিহিংসাবশত বা অন্য কোনো ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক বিবাদে হত্যা কিংবা গুপ্তহত্যার ঘটনা একাধিক ঘটেছে। কিন্তু রাষ্ট্র পিতাকে সপরিবার হত্যার ঘটনা বাংলাদেশেই ঘটেছে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট এমন অনেককে হত্যা করা হয়েছে, যাদের কোনো রাজনীতি সংশ্লিষ্টতা ছিল না, যাদের বিরুদ্ধে ছিল না কোনো ধরনের অভিযোগ কিংবা তাদের কারো আবার অপরাধ সংঘটনেরও কোনো ক্ষমতা বা সুযোগ ছিল না। কিন্তু ঘাতক দল বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কাউকে মার্জনা করেনি, বিবেচনা করেনি কারো বয়স। ভাগ্যক্রমে দেশের বাইরে থাকায় জীবন রক্ষা পায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা হাসিনা ও রেহানার।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল তখন মাত্র চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র, ১১ বছরের শিশু। তার চোখের সামনেই একে একে হত্যা করা হয়েছে বাবা, ভাই, ভাবিদের। মায়ের কাছে গিয়ে বাঁচার আকুতি জানিয়ে হতবিহ্বল রাসেল ঘাতদের কাছে উপহার পেয়েছিল তপ্ত বুলেট এবং স্নেহময়ী জননীর রক্তাক্ত দেহ। সেদিন অমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও আকাশ ভেঙে পড়েনি কিংবা শিশু হত্যার বিক্ষোভে সেদিন কেঁপে ওঠেনি বসুন্ধরা। সব শিশুর বাসযোগ্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের উজ্জ্বল সময়গুলো উৎসর্গ করেছেন, কিন্তু দেশ স্বাধীন করে নিজেকে জীবন দিতে হলো, এমনকি শিশু পুত্রের জীবনও রক্ষা করা গেল না। কিছু বিশ্বাসঘাতক প্রত্যক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে শরিক হলো, আর পুরো জাতি প্রতিবাদহীন নীরবতায় সব মেনে নিল। যে জাতিকে অমিত সাহসে বলীয়ান করে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতার মন্ত্রে করেছিলেন উজ্জীবিত, সেই জাতির এমন অসহায় আত্মসমর্পণ বড় কষ্ট এবং বেদনার।
শেখ রাসেল আমাদের কাছে বেদনার এক মহাকাব্যের নাম। শেখ রাসেলের জন্মদিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক, আর অসহিষ্ণুতা নয়, আর অপরাধীদের প্রশ্রয় বা দায়মুক্তি নয়। বাংলাদেশ হোক সব শিশুর, সব মানুষের নিরাপদ বাসভূমি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ পলাশ শিকদার