সকালবিডি টুয়েন্টিফোর ডটকমঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরিবহন শ্রমিক জনি নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সোনারগাঁ থানায় নিহত জনির বাবা মো. ইয়াসিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, গোলাম দস্তগীর গাজী, আব্দুল্লাহ আল কায়সারসহ ১৮৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখকৃত১৮৭ জন আসামির মধ্যে ১৪৯ নং আসামি শফিকুল ইসলাম (৪৫), পিতা - আজিজুর রহমান, সাং - লাধুরচর, মধ্যপাড়া। তিনি লাধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। প্রথমত লাধুরচরের হবুল্লাহ মাষ্টার হত্যার প্রধান আসামি। তার সাথে তার ভাইয়েরাও এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। এছাড়া তিনি একজন সরকারি শিক্ষক হয়েও বিগত প্রায় দশ বছর ধরে সপ্তাহের প্রায় ৩/৪ দিনই স্কুলে উপস্থিত না থেকে হাজিরায় স্বাক্ষর করেন এবং সকালে বের হয়ে সারাদিন উপজেলার দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন, ফলে তার প্রতি সরকারি যে অর্পিত দায়িত্ব সেটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোমলমতি শিশুদের প্রাপ্য শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায় করেছেন। যখন যে রাজনৈতিক নেতা নির্বাচিত হন, প্রায়ই দেখা গেছে , তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন এবং সময় ক্ষেপণ না করে কতিপয় শিক্ষক নিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে জানান দেন, তিনিও শিক্ষক নেতা এবং তাঁরই নির্বাচন করেছেন।
[caption id="attachment_14672" align="alignnone" width="218"] সরকারি নীতিমালা অমান্য করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম শফিকের রাজনৈতিক শোডাউন[/caption]
শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপজেলা জুড়ে তার উপস্থিতি ছিল সরব এবং ফেসবুকে উপজেলার উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের এবং উর্ধত্বন কর্মকর্তাদের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করতেন। এছাড়াও শুধু পূর্বের শিক্ষা কর্মকর্তাগনই নয় বরং বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তাও এ শিক্ষকের ব্যাপারে সবকিছু জেনেও কিছু বলেন না। ইতিপূর্বেও বহুবার এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে কোন অভিযোগ করলে তিনি জানান, তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে - ব্যস, এটুকুই। তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ নিয়ে কোন তদন্ত কমিটি করা হয়েছে কিনা আদৌ কোন সাংবাদিক তো দূরের কথা এমনকি অন্য কোন শিক্ষকও জানেন না । শুধু এখানেই শেষ নয়, একজন সরকারি শিক্ষক হয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিতর্কিত অনেক কর্মকাণ্ড করে ইতিমধ্যেই পুরো উপজেলা জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। তার নিজ এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির দায়ে এবং ভূমিদস্যু হিসেবে খ্যাত হয়ে কয়েকবারই তার বিরুদ্ধে থানায় ও কোর্টে মামলাও হয়েছে। আর এসব ঘটনা স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় বহুবার প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তিনি বার বার পার পেয়ে গেছেন। উপজেলার শিক্ষকদের বড় একটি অংশ বাদ দিয়ে কতিপয় শিক্ষকদের নিয়ে এবং কর্তাব্যক্তিদের যোগসাজশে শিক্ষক সমিতি গঠন করেন। আর এ সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে পুরো উপজেলায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দাপটের সাথে রাজত্ব কায়েম শুরু করেন। সূত্র জানায়, কর্তাব্যক্তিদের যোগসাজশে বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো থেকে শুরু করে উন্নয়নমুলক কাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে একটি বড় অংশ হাতিয়ে নিয়েছেন। সমিতির তহবিলের দোহাই দিয়ে এভাবেই বছরের পর বছর আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন।হয়েছেন গাড়ি ও বাড়ির মালিক। যেখানে শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণে নিঃস্বার্থভাবে সংগঠনের ভূমিকা রাখার কথা, সেখানেও চাঁদা দিতে হয়েছে। চাঁদা তুলে কতিপয় শিক্ষকদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা শিক্ষা সফরে যাওয়া.! ঘুরতে যাবার টাকাও দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কাছ থেকে নিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা নেন। মোট কথা, উপজেলায় তিনি একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন এবং তার ইচ্ছে অনুযায়ী অন্যান্য শিক্ষকদের ন্যায্য দাবী পূরণেও বাধাগ্রস্ত করেন। কখনো কখনো শিক্ষকদের প্রাপ্যতাটুকু পেতেও তিনি ঠান্ডা মাথায় চাঁদা আদায় করেছেন বলে অনেক ভুক্তভোগী শিক্ষক জানিয়েছেন। বদলি বানিজ্য থেকে শুরু করে এহেন এমন কোন কাজ নেই যেখানে তার আধিপত্যের দাপট দেখা যায়নি কিন্তু ভয়ে অন্যান্য শিক্ষকরা কোন প্রতিবাদ করতে পারেননি কারন তার হাত নাকি অনেক বড় এবং এভাবেই চলেছে তার অবৈধ রাজত্ব। আর বছরের পর বছর তার এহেন কর্মকান্ড মুখ বুঝে সহ্য করে আসছেন পেশাদার সন্মানিত অধিকাংশ শিক্ষক। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করলেও তার নিজ এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত এই বহুরুপী শফিকুল ইসলাম সফিক। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, তিনি নোয়াগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পদেও বহাল রয়েছেন।
এছাড়াও সরকারি কর্মচারী বিধিমালা-২০১৮ লঙ্ঘন করে গত বছর আওয়ামীলীগের কর্মী সন্মেলনকে কেন্দ্র করে গাড়ি বহর নিয়ে শোডাউন করেছেন ভূমিদস্যু খ্যাত শিক্ষক শফিকুল। বছরের পর বছর ধরে তার জুলুম অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। পূর্বের এবং বর্তমান হত্যা মামলার আসামি শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির দাবি জানান ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দৌলত উর রহমান বলেন, তার ভয়ে আমরা কোনো শব্দ করার সাহস পাই না। শুনেছি সে হত্যা মামলার আসামী। তার ভূমিদস্যুতার তথ্যও পেয়েছি। সে একটি রাজনৈতিক দলের পদে ও আছে। তার ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ যানাবো। তারা ব্যবস্থা নিবেন।
এই ব্যপারে শফিকুল ইসলাম শফিক কে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার সাথে যোগাযোগ করা যায় নি।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ পলাশ শিকদার