সকালবিডি টুয়েন্টিফোর ডটকম: নারায়ণগঞ্জে গত দেড় দশকে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন। যারা আবার নানা পন্থায় উপার্জন করেছেন লাখ লাখ টাকা। ছাত্র নয় এমন নেতাও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।
গত জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এসব নেতাদের হাতে দেখা গেছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। ৫ আগস্টের পর তারা আবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কেউ আছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, কেউ আছেন মালয়েশিয়াতে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সেইসব ছবিও ভাইরাল হয়েছে।
আমাদের বিশেষ অনুসন্ধান সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের ১০ মে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন হয়। এতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আজিজুর রহমান আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আশরাফুল ইসমাইল রাফেলকে দায়িত্ব দেয়া হয়। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আহবায়ক পদে থাকা হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্বে থাকা হাসনাত রহমান বিন্দুকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটের ৮ দিন পূর্বে ৮ জানুয়ারী মহানগরের কমিটি বিলুপ্ত হলেও জেলা বলবৎ ছিল।
হাজী শাহ মুহাম্মদ সোহাগ রনি: ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া এলাকায় পুরান বাজারে মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল বিক্রি করতেন। পরে প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের বন্ধু হওয়ার সুবাদে তাকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি। তখন সোনারগাঁয়ে এলজিইডি সহ বিভিন্ন টেন্ডারের কাজ সে একাই বাগিয়ে নিতেন। ওসমান পরিবারের প্রভাব খাটিয়ে সেই থেকে টাকার পাহাড় গড়ে তোলা শুরু করেন তিনি। মোঘরাপাড়া পুরান বাজারে তার একটি তিনতলা বাড়ি, ফুলবাড়ি এলাকায় চারতলা বাড়ি, কামারগাঁও এলাকাতেই গড়েছেন ৭ তলা বাড়ি ও দোতলা নতুন ভবন। রুপায়ন আবাসিক এলাকায় রয়েছে ডুপ্লেক্স বাড়ি যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার মূল্যের জমি। কামারগাঁও এলাকায় তার আরও ৫টি জমি রয়েছেন। শহরের জামতলা আবাসিক এলাকায় এনএস টাওয়ারে দেড় কোটি টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। ব্যক্তিগতভাবে চলাচলের জন্য তার রয়েছে দুটি গাড়ি। এখানেই শেষ নয়। প্রভাব খাটিয়ে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনের কনস্ট্রাকশন ব্যবসা থেকে শুরু করে মেঘনা ইকোনমিক জোনের সকল ব্যবসায় ভাগ বসিয়ে তার একক নিয়ন্ত্রণ গড়ে তুলেন। তার আলাদীনের চেরাগকে বৈধ করতে প্রতিষ্ঠা করেন তার নিজস্ব কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন: সোনারগাঁ রিসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি, সুলতান কনস্ট্রাকশন, সাফওয়ান ট্রান্সপোর্ট, ওভারসিজ কোম্পানী, সৌদি আরবের জেদ্দায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নদীপথে একাধিক ড্রেজার বাল্কহেডও রয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি নিখোঁজ।
আহমেদ কাউসার: স্কুলের গন্ডি পের হয়নি কিন্তু পরিচয় দিতেন ছাত্রলীগ নেতা। বাবা এক সময়ে ডাব বিক্রি করতেন। শহরের নলুয়া এলাকার কাউসার নিজে শহরের রিভারভিউ মার্কেটে একটি দোকানে চাকরি করতেন। শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে মিশে যান। ২০১৭ সালের দিকে অয়ন তাকে ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। বিভিন্ন স্থান থেকে অয়নের সব কালেকশন হতো কাউসারের মাধ্যমে। মুহূর্তে ঘুরে যায় জীবনচিত্র। নলুয়াতে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দুই তলা ভবন নির্মাণ করেন। গত বছর পাশেই আরো একটি ৫ তলা ভবন কিনেন। শহীদনগর ও আশপাশ এলাকাতে প্রচুর জমির মালিক তিনি। ৫ আগস্টের আগে নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকাতে অস্ত্রবাজীর ঘটনায় তার একাধিক ছবি প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে অস্ত্র হাতে তাকে দেখা গেছে অসংখ্যকবার।
হাবিবুর রহমান রিয়াদ: সরকারী তোলারাম কলেজ ছিল তার দখলে। বনে যান স্বঘোষিত ভিপি। একই সঙ্গে ছিলেন কলেজ ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি। তোলারাম কলেজ ও নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজের মেয়েরা ছিল তার কাছে জিম্মি। রাস্তায় আটকে জোরপূর্বক রাজনীতিতে নাম লিখাতেন রিয়াদ। তাছাড়াও পদ পদবির লোভ দেখিয়ে করতেন অনৈতিক কাজ। শহরের মাসদাইর এলাকার প্রধান বাড়ির ছেলে রিয়াদের ভাগ্য ঘুরে যায় গত এক দশকে। জালকুড়ি ও ভূইগড়ে ৫০ শতাংশ জমির মালিক হয়েছেন তিনি। ছাত্রলীগের প্রভাবে অয়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে কোটি টাকা কামিয়েছেন ঝুট ব্যবসা ও টেন্ডারবাজি করে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি জাহিদ সুজন জানান, হাবিবুর রহমান রিয়াদ ২০০৭-০৮ সেশনের অনার্স বর্ষের ছাত্র হয়েও তোলারাম কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করে রেখেছিল। সেখানে ভর্তি বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। রিয়াদের এক চাচা যার নাম হচ্ছে আশা। তাকে আশা ডাকাত নামে সবাই চিনে। রিয়াদের মেঝো চাচা জুয়ার বোর্ড বসায়। নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় সে জুয়ার বোর্ড বসাতেন আগে। জমি দখলবাজি করে কোটিপতি রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ ভূঁইয়া মাসুম গত কয়েক বছরে জমি দখলবাজী করে কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। হাতে প্রায়শই অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যেত এ নেতাকে। রূপগঞ্জের পূর্বাচল, ভোলাব, ভুলতা এলাকাতে বিভিন্ন জনের জমি দখলবাজীতে লিপ্ত ছিল এ নেতা। আলোচিত সমালোচিতরা
আলোচিত সমালোচনায় ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতা। তারা হলেন জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শাহরিয়ার রেজা হিমেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাইসুল আহমেদ রবিন। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দরা ওকালতনামা, হাজিরা ও জামিননামা জালিয়াতি করার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া থেকে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাইসুল আহমেদ রবিনকে আটক করে ফতুল্লা থানায় সোপর্দ করা হয়েছিল। এ জালিয়াতি করে তিনি অঢেল টাকার মালিক বনেছেন।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শাহরিয়ার রেজা হিমেলের বিরুদ্ধে জমি দখলের অসংখ্য অভিযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে অনেকবার ভুক্তভোগীরা মানববন্ধন করেছিল।