সকালবিডি টুয়েন্টিফোর ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে মেলার উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী। মেলা চত্বর প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলা চলবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, এই লোকজ উৎসব আমাদের সংস্কৃতির অংশ। আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরে এই মেলা। এই লোকজ উৎসবে বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যও ফুটে উঠে। স্বৈরাচার সরকার পাশের দেশে বসে এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এর আগেও তারা হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং দেশের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিকাশে এ ধরনের মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের কাজকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে আমরা উদ্যোগ নেব।” “বিগত স্বৈরাচার সরকার দেশের সংস্কৃতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছে। মিডিয়া এবং ধর্মকে ব্যবহার করে দেশকে দুইভাগে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু জনগণের ঐক্য সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ করেছে। এখন আর কেউ দেশের সংস্কৃতিকে ভাগ করতে পারবে না। এই খেলা শেষ।”
ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহাবুব আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুল রহমান, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার নাইমুল হক এবং সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ড. মাওলানা ইকবাল হোসেনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী আশা প্রকাশ করেন যে, “জাদুঘরের লোক সংস্কৃতির উন্নয়নের যে কাজগুলো শুরু হয়েছে, তা পরবর্তী সরকারও চালিয়ে যাবে।” মেলাটি দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে প্রসারিত করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করার লক্ষ্যে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আয়োজকরা জানান, দেশীয় সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে আয়োজিত মাসব্যাপী এ লোক কারুশিল্প মেলায় ফাউন্ডেশনে কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনী, লোকজ প্রদর্শনী, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, গ্রামীণ খেলাসহ বাহারি পণ্য সামগ্রীর প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।
মাসব্যাপী উৎসবে প্রতিদিন লোকজ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণখেলারও আয়োজন থাকছে।
এবার ফাউন্ডেশনের কারুশিল্পীদের ৩২টি স্টলসহ ১০০ স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রথিতযশা ১৭ কারুশিল্পী এই প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন।
ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহাবুব আলম সকালবিডি টুয়েন্টিফোর ডটকম কে বলেন, ‘দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রদর্শন ও পুনর্জীবন দেওয়াই মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি জানান, মেলার পাশাপাশি এই লোকজ উৎসবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালি গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, মাইজভাণ্ডারী গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গায়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তি-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক খেলা, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী থাকবে। ইতোমধ্যে ফাউন্ডেশনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এ উপলক্ষে ফাউন্ডেশন চত্বর বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। এই মেলা আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।