সিদ্ধিরগঞ্জে হত্যা মামলার আসামী মেহেদি প্রকাশ্যে ঘুরছে, নীরব প্রশাসন

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল বার্মাষ্ট্যান্ডের মেহেদী এন্টারপ্রাইজের মালিক আনোয়ার হোসেন মেহেদী বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ-০৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের হাত ধরে শুন্য থেকে টাকার কুমির বনে গেছে। তার এই বিশাল অট্রালিকা, পেট্রোল পাম্প,ফ্লোডিং পাম্প, বিলাশ বহুল গাড়িসহ অসংখ্য তেলের গাড়ি, বউ বাচ্চাদের নামে অঢেল সম্পত্তির হিসাব নিতে দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী। কিভাবে হঠাৎ আঙুলফুলে কলা গাছ হয়ে উঠেছে মেহেদী তা দেখে অবাক এলাকার সচেতন মহল। কারণ হিসেবে এলাকাবাসী জানান,  মেহেদির বাবা মরহুম আফাজুদ্দিন অত্র এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মহসিন প্রধানের বাসায় কাজ করতো, এই মেহেদিদের বাড়িতে থাকার মতো ছোট্র একটি বেড়ার ঘর ছাড়া আর কোন ঘর ছিলোনা। 

সেই মেহেদী কিভাবে রাতারাতি এতো সম্পদের মালিক হলেন। তারা বলেন, মেহেদি গোদনাইল মৌজায় অনেক নিরীহ মানুষদের কৃষি জমি দখল করে গরুর খামার,মাছের খামারের ব্যবসা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে, তার পালিত বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না।

নারায়ণগঞ্জে শামিম ওসমানের ডাকা যেকোনো সভা, সমাবেশে, হরতাল,অবরোধ কর্মসূচিতে মেহেদীর নেতৃত্বে  হাজার হাজার লোক যোগদান করতো।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর মেহেদির বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। ১ম মামলাটি দায়ের হয় ২৬আগস্ট যাহার নং-২৫, এবং ২য় মামলাটি দায়ের হয় ২৭আগস্ট যাহার নং-২৭। হত্যা মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরাঘুরি করছে মেহেদী। তার এই অবাধ ঘুরাঘুরিতে আতঙ্কিত এলাকার সাধারণ মানুষ। মেহেদী গ্রেফতার না হওয়াতে  এলাকাবাসী,ছাত্র- ছাত্রী ও অভিবাবকদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। 

এলাকাবাসী আরো জানায়, মেহেদির ভাইয়েরা একসময় যে ট্যাংকলরিতে চাকুরি করতো আজকে সেই ট্যাংকলরি এসোসিয়েশনের সভাপতি এই মেহেদি। মেহেদি সভাপতি হওয়ায় তার অন্যান্য ভাইয়েরা এই এসোসিয়েশনকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে আসছে তাই তাদের কথার বাহিরে কোনো শ্রমিক যেতে পারেনা। যারা তাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে লাঞ্চিত করে ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করেন।

কয়েকজন ড্রাইভারের সাথে কথা বলে জানা যায়,এই মেহেদিগংরা পদ্মা ডিপোর জেট এ ওয়ান তেলের মিটার পয়েন্টে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে প্রতিটি পরিবহনে তারা ন্যায্য তেল না দিয়ে সেন্টির নামে হাজার হাজার লিটার তেল তারা অন্যত্র বিক্রি করে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

মেহেদির বিরুদ্ধে দলিল জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, অন্যের জায়গা জোর ভাবে দখল,সরকারি জায়গা দখল সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

এলাকাবাসী আরো বলেন, আওয়ামিলীগ সরকারের সাবেক এম পি শামিম ওসমানের প্রভাব খাটিয়ে সে নিজেকে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডন মনে করেন,যার কারনে সে ডিপোর বড় বড় কর্মকর্তাদেরকে অন্যত্র বদলি করিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ডিপোতে তেল নিতে আসা ভোক্তাদেরকে মিটার ট্যাম্পারিংয়ের মাধ্যমে তেল কম দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন যার প্রমান কয়েকটি জাতীয় চ্যানেলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছিলো।

কিছুদিন আগে মেহেদির নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেহেদি এন্টার প্রাইজের স্টাফদের মনমতো সুবিধা ভোগ করতে না দেয়ায় মাসুম নামের একজন দারোয়ানের বিরুদ্ধে মানব বন্ধন করিয়ে তাকে ঢাকার হেড অফিসে বদলি করার অভিযোগ উঠেছে আনোয়ার হোসেন মেহেদির বিরুদ্ধে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,মেহেদি রেলওয়ের জমি দখল করে নিজস্ব গাড়ির টার্মিনাল ও ওয়ার্কশপ বানিয়েছেন। 

ডিএনডি লেকে অবৈধ ভাবে মাছের খামার গড়ে তুলেছেন,লেকপাড়ে দুপাড়ে গরুর ঘাসের চাষ করতেছে যা ভবিষ্যতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত লেকপাড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী জানান, মেহেদি আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার জমির পাওয়ার তার নামে করে নেয় যা দিয়ে পরবর্তিতে ব্যাংক থেকে মোটা অংকের লোন নিয়ে নেন।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে পদ্মা অয়েল কোম্পানির কর্মচারিদির এক ডিপো থেকে অন্য ডিপোতে  বদলি বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, বিএনপি নেতা অকিল ভুইয়ার সাথে আতাত করে অকিল ভুইয়ার বিয়াই ইলিয়াস কবিরকে গোদনাইল পদ্মা ডিপোতে পুনরায় তার পদে ফিরিয়ে আনতে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করেন, উল্লেখ্য যে,গত আট থেকে ৯ মাস আগে গোদনাইল পদ্মা অয়েল কোম্পানি থেকে ইলিয়াস কবিরকে চট্রগ্রামের গুপ্তখালে বদলি করা হয়।

এলাকার সচেতন মহলের দাবী মেহেদীর বিরুদ্ধে সঠিকভাবে তদন্ত করলে তার আরো অপকর্মের প্রমাণ পাওয়া যাবে। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: Content is protected !!