সুমনা (কেএনজিসি প্রতিনিধি)
ঢাকা মাদ্রাসা, প্রতিষ্ঠা ১৮৭৪। চার বার নাম পরিবর্তন হয়ে আজকের কবি নজরুল সরকারি কলেজ। ১৪৭ বছর ধরে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বহন কারী একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ কলেজের শিক্ষার্থীদের ছিল অসামান্য অবদান। বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জর্জ ক্যাম্বেল এর আমলে ‘Madrasa Reforms committee’ এর অনুমোদনে মোহসিন ফান্ডের টাকায় ১৮৭৪ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রসার মডেলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে তিনটি নতুন মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়। যদিও হাজী মোহাম্মদ মহসিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নবপ্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলোর নাম দেয়া হয় মহসিনিয়া মাদ্রাসা, তথাপি ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা বহুল পরিচিতি লাভ করে ঢাকা মাদ্রাসা নামে। বৃটিশ শাসনামলে বাংলাদেশে এগুলো ছিল মুসলমানদের জন্য করা প্রথম সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
১৯১৫ সালের ১৬ নভেম্বর এক সরকারি আদেশে মাদ্রাসার ব্যয় ভার বহন করার দায়িত্ব বাংলার সরকারের ওপর ন্যস্ত করা হয়। ১৮৮০ সালে প্রথম অধ্যক্ষ মওলানা ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দীর তত্ত্বাবধানে মুসলিম স্থাপত্যরীতি অনুযায়ী মাদ্রাসা ভবন তৈরি করা হয়।
মাদ্রাসায় সাতটি শ্রেণি ছিল। আরবি বিভাগে শুধু আরবি শিক্ষার্থীরা পড়ত। ইংরেজি বিভাগে (পরবর্তীতে এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগ) ইংরেজি শিক্ষার্থীরা পড়ত। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মাদ্রাসার ৩৩৮ জন ছাত্রের মধ্যে ২০২ জন ছাত্রই ছিল এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগের। ১৯১৫ সালে সরকার কর্তৃক অন্যান্য মাদ্রাসার মতো নিউ স্কিম পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর প্রেক্ষিতে ঢাকা মাদ্রাসা হাই মাদ্রাসা হয়। ১৯১৬ সালে এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগ আলাদা হয়ে ঢাকা গভঃ মুসলিম হাই স্কুল হয়।
ঢাকা মাদ্রাসা এতোটাই জনপ্রিয় ছিল যে, দূর-দূরান্তের মুসলিম শিক্ষার্থীদের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল ঢাকা মাদ্রাসা।১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ছাত্র ভর্তি না হওয়ায়,১৯২৩ সালে ঢাকা মাদ্রাসাকে ইসলামিক ইন্টারমেডিয়েট কলেজে রূপান্তরিত করা হয়।
১৯৫৮ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশে ১৯৬২ সালে মাদ্রাসা তুলে দিয়ে মাদ্রাসার ক্লাসগুলোকে মাধ্যমিক ক্লাসে পরিণত করা হয় এবং ঢাকা মাদ্রাসা পরিচিতি লাভ করে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজের স্কুল বিভাগ হিসাবে। এরপর ১৯৬৮ সালে কলেজ থেকে স্কুল আলাদা হয়ে গিয়ে নাম হয় ইসলামিয়া সরকারি হাই স্কুল, ঢাকা। কলেজের প্রধান ভবনের নিচতলায় উত্তর-পূর্বাংশের এই স্কুলের কার্যক্রম এখনও চলছে। ১৯৬৮ সালে স্কুল আলাদা হয়ে যাবার পর কলেজের নামও পাল্টিয়ে রাখা হয় সরকারি ইসলামিয়া কলেজ, ঢাকা। ১৯৭২ সালে পুনরায় নাম পরিবর্তন করে ‘কবি নজরুল সরকারি কলেজ’ রাখা হয়। অদ্যাবধি এ নামেই পরিচিত হয়ে আসছে। ১৯৭৪ সালে ১৬৯ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ২১,০০০ জন।
১৯৯২ সাল থেকে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ১৬ ফেরুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।